কোটার খোঁটা এবং আমরা

সারা দেশে ইন্টারনেট নাই এর আজ তৃতীয় দিন। প্রথম দুই দিন আনন্দে কাটলেও এখন হতাশ হয়ে যাচ্ছি। আমার জীবিকার পুরোটাই ইন্টারনেট নির্ভর। আমার ক্ষুদ্র ব্যবসার উপর নির্ভর করে বাইরের দেশের অন্তত ৩ টা কোম্পানি। তাদের সাথে যোগাযোগের কোন পদ্ধতি পাচ্ছি না। সার্ভারে কোন জটিল ঝামেলা হলে আমার ব্যবসার "লালবাত্তি"।

কি করব কিছু বুঝে পাচ্ছি না। বিচার জানানোর কেউ নেই। আমার মত আরো আট দশ লাখ অনলাইন প্রফেশনাল সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। 

সারা দেশের ইন্টারনেট একযোগে বন্ধ থাকাটা কত হাজার কোটি টাকার ক্ষতি সেটা কি কেউ গুনে দেখবে?
এই লেখাটা যখন লিখছি তখনও ইন্টারনেট নাই, বাইরে কারফিউ চলছে। ড্রাফটে তুলে রেখেছি পরে পাবলিশ করব এই জন্য।

২৪.০৭.২০২৪

ইন্টারনেট ফেরত এসেছে, আশার বিষয়। তবে পুরোদমে নয়। খুবই মন্থর গতিতে। এখন কিছু বিষয়ের বিশ্লেষন করা যাক। আমরা যারা ঘরে বসেই মোটামুটি আমাদের সবকিছু করি, জীবিকার জন্য নির্ভর করি ইন্টারনেটের উপর তাদের গত কয়েকদিন বেশ উৎকন্ঠায় গিয়েছে। কারন আমাদের যে কোন কাজই সময় নির্ভর। ঠিক সময় মত কাজ ডেলিভার করতে না পারলে সে ক্ষতি আদতে আর পুষিয়ে ওঠা যায় না।

আমরা চাই, দেশে সবসময় একটা শান্ত অবস্থা বিরাজ করুক, দূর্নীতি না থাকুক। অশান্তি কোন কাজের নয়। এই দেশ ইতিমধ্যেই স্বাধীন, একে নতুন করে স্বাধীন করার কিছু নেই। আমাদের দরকার সুশাসন যথাসম্ভব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় থাকা।

কোন কালেই দেশের শাসক গোষ্ঠী জনগনের পছন্দের তালিকায় ছিলনা, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। এটা ধ্রুব সত্য। আমরা বড়জোর অন্যদেশের সাথে তুলনা করতে পারি। আবার সেখানে গেলেও দেখা যাবে তাদের সরকারও জনগনের সব আশা পূরন করতে পারছে না।

এখন আসি যৌক্তিক কথায়। কোটা প্রথা কি যৌক্তিক? এক কথায় উত্তর "না"। কোটা প্রথা বাতিলের আন্দোলন তাই খুবই যৌক্তিক একটা আন্দোলন। আমার মনে হয় বুদ্ধিমান যেকোন মানুষই চাইবেন দেশে মেধার বিকাশ ঘটুক।

রাস্তায় আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করা কি যৌক্তিক? উত্তর হল "না"। কিন্তু আমাদের দেশের সমস্যা হচ্ছে রাস্তায় না নামলে কোন দাবি আদায় করা যায় না। 
 
একটা অসম্ভব রকম বৈষম্য নিয়ে দেশের সরকারি চাকুরি নিয়োগ ব্যবস্থা চলছিল। সেটার অবসান হয়েছে। মনে শান্তি পাচ্ছি। আমি নিজে কখনো চাকুরি করিনি। চাকরি জিনিসটাই আমার কাছে অসহ্য লাগে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগেই ঠিক করে ফেলেছিলাম কি করব, কিভাবে জীবন কাটাব। আমি পড়েছি আনন্দের জন্য।

আমাদের দেশে হাজারো বেকার তরুন শুধুমাত্র সঠিক শিক্ষার পরিবেশের অভাবের কারনে জানেনা তাদের ভবিষ্যত কি? সেখানে এরকম একটা আন্দোলন যে হবেই সেটা জানা কথা।

কোটা আন্দোলন নিয়ে জলঘোলা এবারই নতুন নয়। ২০১৮ তেও এর ফায়দা লুটেছিল কিছু লোক। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশজুড়ে চরম অরাজকতা শুরু করার আগেই সরকার তাই হার্ড লাইনে চলে গেলো।

কিন্তু আরেকটু ভালোভাবে শেষ হতে পারত ব্যপারটা। যাদের সন্তান মারা গেলো পুলিশের সাথে মারামারি করতে গিয়ে, এই মেধারা ফিরে আসবে না।

আপনি শুধু চোখ বন্ধ করে একবার চিন্তা করেন, একটা দেশ, যেখানে মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার সমতা আনার জন্য রাজপথে রক্ত ঝরে। সরকারের কি অনেক আগেই উচিৎ ছিলনা এই ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলন মেনে নেয়া?

ইতিহাস বলে, এদেশে ছাত্রদের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন সরকারই আজ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারেনি। আফসোসের বিষয় কেউ ইতিহাসের শিক্ষা মনে রাখে না।

সময়, মানুষের জীবন এবং সম্পদের কি নিদারুণ অপচয়।
 
------

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আমাদের আবারও ভাবার সময় হয়েছে। যে বড় বড় আন্দোলনগুলো ছাত্ররা করেছে সেগুলো কোন রাজনৈতিক ব্যানারে পরিচালিত হয়নি। এরা নিজেরাই যৌক্তিক ভাবে একত্রিত হয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলন করার জন্য কোন ধরনের রাজনৈতিক পরিচয় লাগে না। বরঞ্চ এর উল্টোটা সত্য। রাজনৈতিক দলগুলোর দরকার হয় ছাত্রদের মেধার অথবা পেশী শক্তির।

আমাদের শিক্ষাঙ্গন পেশী শক্তি দেখানোর জায়গা নয়। তাদের কোন দরকার নেই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করবার। দেশের যেকোন প্রয়োজনে তারা এমনিতেই সংঘবদ্ধ হতে পারে।

গত পনের বছর ধরে আওয়ামীলীগ যদি শাসনে থাকে, তবে বিচক্ষন হতে সমস্যা কোথায় ছিলো? এই যে ছাত্ররা মরল, এত জ্বালাও-পোড়াও চলল, দেশে আর্মি নামাতে হল - এর সবগুলোই কিন্তু আওয়ামীলীগের খাতায় লেখা হয়ে থাকবে।

দেশে গণতন্ত্রের নামে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা আছে। এর কারনও কিন্তু আগের সরকারগুলোর চরম ব্যর্থতা। সেখান থেকেই কি আওয়ামীলীগ শিক্ষা নিতে পারত না?

ইন্টারনেটে প্রচুর গুজব ছড়াবে একদল, কারন ক্ষমতাসীনদের যে কোনভাবে নাস্তানাবুদ করাটাই তাদের কাজ। কিন্তু এই জন্য যদি ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকতে হয়, তবে সেই গুজব জনমনে পাকাপাকি বসে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ভীতি এবং গুজবের বিরুদ্ধে কাজ করে সবসময়। সেটা আটকে দিয়ে স্বৈরাচারী তকমা গায়ে লাগাবার কি দরকার?
 
ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়। - এ বিষয়টা মাথায় রাখি সর্বদা।

আমি খুব অবাক হয়ে দেখলাম, দেশের বাইরে যে সকল শ্রমিক যাচ্ছে, তারা সবথেকে বেশি গুজব ছড়ায় ফেইসবুকে এসে। এরা অশিক্ষিত আমি সেটা মেনে নিচ্ছি, কিন্তু সরকারেরও কি দরকার ছিল না একটা শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে গুজবের জবাব দেয়া যায়?

একটা যোক্তিক দাবিকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দেশে সেটা কোনভাবেই আমাদের কারো কাম্য নয়।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন