মূর্খের গণতন্ত্র
দেশ নিয়ে লেখাটা খুব কঠিন। যাই লিখবেন না কেন, কিছু লোকের আঁতে ঘা লাগবেই। আমি সবসময়ই বলে এসেছি মূর্খের দেশে গণতন্ত্র থাকে না। যতই বিপ্লব হোক আর মানুষ মরুক বছর শেষে দেখা যাবে এদেশের মানুষ দশ বছর আগে যে মানসিকতার ছিলো এখনো তাই রয়ে গেছে।
গনতন্ত্রের সুফল পেতে হলে দেশের ৮০ ভাগ জনগণকে রাজনৈতিক ভাবে শিক্ষিত হতে হবে। অতবা নূন্যতম নৈতিক মূল্যবোধ থাকতে হবে। এ দুটোই গড়ে ওঠে শিক্ষা ব্যবস্থা অথবা সাংস্কৃতিক বলয় থেকে। আমাদের না আছে ধর্মীয় শিক্ষা, না আছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অথবা নৈতিক দৃঢ়তা। মক্তবে যা বলা হয়, আর হুজুরে ওয়াজে যা বলে তাই বিশ্বাস করে বসে থাকে বেশিরভাগ লোক। রাজনৈতিক নেতায় মাইকে যেভাবে চিল্লায়, সহমত ভাইয়েরা সেভাবেই ঘাড় নাড়ে।
চিন্তা করে নিজে ভালো মন্দ বুঝে সিদ্ধান্ত নেবার লোক খুব কম। আমরা না মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জন্য হয়ে গেছে ক্যানসারের মত। যত ধরনের গুজব আছে সব গুলোকে গুলিয়ে এখানে পরিবেশন করা হচ্ছে। গত পনের বছরে মানুষের মুখের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল এটা সত্য কথা, কিন্তু এখন যা হচ্ছে সেটাও আলাদা কিছু নয়। সবাই কে এক দলের হতে হবে এমন একটা দিব্যি নিয়ে নিয়েছে সবাই। তুমি কাউকে ঘৃণা করো মানে এই নয় যে আমাকেও সেই একই ব্যাক্তিকে ঘৃণা করতে হবে!
২০২৪ সালের শেষে এসে দেশ ইসলামিস্টদের দখলে না গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাদের দখলে। হেন জিনিস নেই এরা বিকৃত করছে না। ধর্মের উদারতা এদের শিক্ষায় নেই। খুব মোটা দাগে সোশ্যাল মিডিয়া বিবেচনায় - কেউ যদি হুট করে বলে দেয় বাংলাদেশ একটা মৌলবাদী রাষ্ট্র, আপনি তাকে ভূল প্রমান করতে পারবেন না।
আমাদের ধর্মান্ধরা বরাবরই বলে এসেছে এটা একটা মুসলিম রাষ্ট্র, অথচ সংবিধান বলে ভিন্ন কথা। এই রাষ্ট্র সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে।
আঘাতটা সবসময় সবার আগে আসে সংস্কৃতির উপর। যাত্রা গান, পালা গান, পহেলা বৈশাখ, পথ নাটক, একুশের প্রভাত ফেরী, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, রবীন্দ্রনাথ সব কিছুতেই এই দলের প্রচুর আপত্তি। তারা পারলে এখনই শহীদ মিনার ভেঙে ফেলত, জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করত।
পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাবার পরেও, বিশাল ভূ-রাজনৈতিক দূরত্ব থাকার পরেও এই জনগোষ্ঠীর একাংশ পাকিস্তান প্রেমী।
ভারতকে অপছন্দ বা ঘৃণা করার একশটা কারন থাকতে পারে কিন্তু পাকিস্তানকে ভালোবাসার একটা কারনও আমি খুঁজে পাইনা।
শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে যে দেশগুলো ভাগ হয়েছে তারা নিয়তির লিখন খন্ডাতে পারবে না। এসকল জায়গায় ক্যাঁচাল সারাবছর লেগে থাকবেই।
নতুন সরকার এসে আপাত দৃষ্টিতে খুব বেশি পরিবর্তন আনতে পারেনি। রাস্তার শৃঙ্খলা আগেও কম ছিল, এখন তা পুরোপুরি ভেঙে যাবার পথে। শহর জুড়ে অটো রিকশা চলছে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে। ক্ষেত্র বিশেষে এরা প্রাইভেট কারের ড্রাইভারকে গালিগালাজ করছে আস্তে চালানোর জন্য। আমি নিজে এর স্বাক্ষী।
ব্যবসায়ীরা আগেও দুই নাম্বারী করত এখনো তাই করে যাচ্ছে। যা কিছু ঘটছে এই দেশের সীমানায় তা এই জনপদ থেকে উঠে আসা বাঙ্গালীই করছে। তাই নীতিগত ভাবে বলাই যায়, বাঙালি একটা অসভ্য জাতি।
বাক স্বাধীনতা মানে, গলার জোরে আরেকজনের কন্ঠরোধ করা নয়, আগে চাঁদাবাজি করতে পারতাম না এখন অবাধে পারি সেটা নয়। ধর্মের নামে দেশের নাম পরিচয় মুছে দেবার চেষ্টা করা, সংস্কৃতিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা, কিংবা জাতীয় সংগীতকে মুছে ফেলার নাম বাক স্বাধীনতা নয়।
রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকে না। রাষ্ট্র একটা ধারনা মাত্র। ধর্ম মানুষের খুব ব্যাক্তিগত একটা বিষয়। আমরা সেটাকে খুব স্থূলভাবে কর্দমাক্ত করে ফেলছি। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে জলঘোলা করা যাবে, ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া যাবে, মানুষ খুন করা যাবে- কিন্তু মানুষ হওয়া যাবে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন