আমরা বুদ্ধিজীবীদের ঘৃণা করি

কবি-সাহিত্যিকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সমালোচনা সহ্য করতে না পারা। যেহেতু তারা সৃষ্টিশীল মানসিক খোরাক উৎপাদনে ব্যস্ত থাকেন, তাদের ধারনা তারা যাই প্রসব করবেন সেটাই পাচ্য।

পরিচিত কারো লেখা যদি ভাল না লাগে তাই চুপ থাকি। কি দরকার। কালের গর্ভে এমনিতেই সেটা হারিয়ে যাবে। যদি কারো অন্তঃসারশূন্য লেখাও ভালো না লাগে তবে সেটা বলা যাবে না। বললেই কাট্টি।

বাংলাদেশের বয়স খুব বেশি না। আমাদের বুদ্ধিজীবির সংখ্যাও হাতে গোনা। বিশাল বড় কোন দার্শনিকও আমাদের এখানে জন্মাননি যারা পৃথিবী ব্যাপ্তি নিয়ে আলোচনায় আছেন বা থাকবেন।

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এরা নমস্য। এদের নিয়ে মাতম করা বাতুলতা। ছাগলের তিন নম্বরের বাচ্চার কাজ। সে জানে না তার কি করা উচিৎ, তাই অযথাই...। যারা নজরুল পড়েনি তারাও তাকে ভালবেসে নিজেদের দলে টানতে চায়। তিনি যে সেকুল্যার মতাদর্শের ছিলেন এরা সেটা অবিশ্বাস করে।

রবীন্দ্রনাথ যে হিন্দু ছিলেন না, বরঞ্চ ব্রাহ্ম ধর্মের মতানুসারী এরা তাও খতিয়ে দেখে না। ঘৃণা করা দরকার তাই করছি। কান নিয়েছে চিলের মত তাই অনেক লোকই মনে করে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পাওয়াটা নজরুলের বদান্যতায়। সোজা বাংলায় চুরি। অথচ বয়সের হিসেবে রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পান নজরুল তখন বালক মাত্র।

বেশির ভাগ লোকজন না পড়েই, না জেনেই সাহিত্য বা তার স্রষ্টাকে ঘৃণা করে। সাহিত্যকর্মের উদ্দেশ্য কখনই মারামারি লাগানো নয়। ভালোবাসতে কারন দরকার হয় না। ঘৃণা করতে দরকার।

বাংলাদেশ ২.০ লোড হবার পরে, আমি ইউটিউবে যে লোকটার বক্তৃতা সব থেকে বেশি শুনি তিনি হচ্ছেন, সলিমুল্লাহ খান। ইনি আবার আহমদ ছফার শিষ্য। চরম বাগ্মী এই লোক যখন কথা বলা শুরু করেন তখন আমি দুই প্লেট বিরিয়ানি এমনিতেই শেষ করে দিতে পারি। 

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তিনি যখন বলা শুরু করেন তখন এক রেললাইন থেকে গাড়ি অন্য রেললাইনে চালিয়ে দেন। On Track এ থাকতে পারেন না। বলা শুরু করেন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিন্তু মাঝখানে চলে গেলেন বাংলাদেশের ১০০ বছরের ইতিহাসে, রাজনীতিতে...। তবুও ভালো লাগে। 

তিনি মিথ্যা বলেন না। একারনেই তাকে শুনতে ভাল লাগে। তার দেয়া বর্ননাও অহীর মত আকাশ থেকে এসে পড়েনি। তিনি ফ্যাক্ট দিয়ে বলার চেষ্টা করেন। অনেকটা রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মত। প্রচন্ড পড়ুয়া লোক। এরকম আরেকজনের কথা আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি, তিনি হচ্ছেন ইয়োভাল নোয়া হারারি। শুধু তার লেখাই নয়, তার বলার ভঙ্গিও চমৎকার।

এনারা নমস্য, কারন এদের চিন্তাভাবনা আর সিদ্ধ্বান্ত ধর্ম থেকে আসে না, আসে নিজস্ব শিক্ষার দর্শন থেকে। এরা যখন কোন কিছু বললেন তখন ধর্মীয় বায়াসনেস থেকে সরে এসে বলার চেষ্টায় থাকেন। এই জিনিসটাই হচ্ছে সেক্যুলারিজম। নাস্তিকতা থেকে এর স্পষ্ট ব্যবধান আছে।

রাষ্ট্র যদি নিরপেক্ষ না হয় তবে এই ধরনের বুদ্ধিজীবি গজায় না। রাষ্ট্রের কোন ধর্ম নেই, কারন সে ব্যাক্তি নয়। ব্যক্তির ধর্ম থাকে। বাংলাদেশকে তার নিজস্ব পরিচয় থেকে মুছে দিতে চান, তবে শুধুমাত্র এর বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে নিয়োজিত লোকগুলোকে ছাঁটাই করে ফেলুন। এরকমটা আগেও হয়েছে।

এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা তৈরি করেছি, যেখানে গন্ডায় গন্ডায় এ-প্লাস বের হয়ে আসে। এরা নিজেদের মেধাবী দাবী করে, কিন্তু চাকুরির আশায় হাঁ করে বসে থাকে। এই ব্যবস্থা চাকুরীর জন্য চাকর চায়, মেধাবী নয়।

আমাদের শিক্ষা আনন্দদায়ক নয়। 

 

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন