মহাশুন্যে পরান মাস্টার এবং মেঘ ও মেশিন

সৈয়দ শামসুল হক - আমি তাকে চিনি কবি হিসেবে। তার কোন কবিতা আমার মুখস্ত নেই। তবে অনেকগুলোই পত্রিকা মারফত পড়েছি। বিশেষ করে একটি কবিতার কথা আমার মনে আছে, "নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়" - নামে।

একটু কোট করা যাকঃ
 

অতি অকস্মাৎ
স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ? কিসের প্রপাত?
গোল হয়ে আসুন সকলে,
ঘন হয়ে আসুন সকলে,
আমার মিনতি আজ স্থির হয়ে বসুন সকলে।
অতীত হঠাৎ হাতে হানা দেয় মানুষের বন্ধ দরোজায়।
এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায়
নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
কালঘুম যখন বাংলায়
তার দীর্ঘ দেহ নিয়ে আবার নূরলদীন দেখা দেয় মরা আঙিনায়।

এটা তার বিখ্যাত কবিতা। অনেকেই পড়েছেন।  

টিভিতে তিনি মাঝে মধ্যে আসতেন। কৈশোরে বিটিভিতে তার কবিতার আবৃত্তি শুনেছি। বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী কবিদের মধ্য তাকে আলাদা ভাবে চেনা যায়।

গল্পকার হিসেবেও তিনি সাবলীল। তবে তিনি যে সায়েন্স ফিকশনও লিখে গেছে সেটা আমার একদমই অজানা ছিল। সেদিন বেঙ্গল বইয়ে ঢু মারছিলাম, সময় পেলেই করি। বইয়ের গন্ধ আমার ভাল লাগে। সেখানেই হটাত করে নজরে আসে তার সায়েন্স ফিকশন সমগ্রতে।


 

"মহাশুন্যে পরান মাস্টার" এবং "মেঘ ও মেশিন" - এই দুটো গল্প আছে বইটিতে। সায়েন্স ফিকশন যে এমনও হতে পারে সেটা আসলে না পড়লে আমার জানা হতনা। 

মাটির কাছাকাছি গিয়ে গল্প বলা - এরকম ভাবে যদি বলি তবে বেশি বলা হবে না। খুব সাধারণ এক গ্রাম্য পাগলের গল্পকে নিয়ে গেছেন সমাজের একটা শক্তিশালী চিত্র তুলে ধরতে। সেখানে অভাব আছে, অভিযোগ আছে আর আছে আশার গল্প। অলৌকিক ভাবে ক্ষুধার সমস্যা সমাধানের গল্প।

পরের গল্প মেঘ ও মেশিনে তিনে আসলে নিজেকেই খুঁজে বেড়িয়েছেন। নিজের চরিত্র এঁকেছেন এক কঠোর সমাজের মাঝখানে। যেখানে প্রেম, ভালোবাসা নাই, কবিতা, গল্প আর গান অনুপস্থিত। এরকম একটা সমাজে বিপ্লবের স্বপ্ন তিনি দেখেছেন সবজান্তা এক "মাইন্ড রিডার" মেশিনের হাত ধরে। যান্ত্রিক আর স্বার্থানেষী মহলের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি কিভাবে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন সেটাই মূল এই গল্পে।

গতানুগতিক সায়েন্স ফিকশন নয় এই দুটো গল্পের একটিও। যারা অতীত, ভবিষ্যত আর সময়ের রহস্য খুঁজে বেড়ান বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মাঝে এই বই তাদের ভালো লাগবে না।

সৈয়দ হক ভবিষ্যতের কথা বলেছেন ঠিকই কিন্তু আমি দেখেছি বর্তমান আর অতীতকে। সুখপাঠ্য নয়, তবে চিন্তার উদ্রেক করবে বইয়ের গল্প দুটো।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন