ভাই যাবেন?

শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিচে বাইক নিয়ে বামে ইন্ডিকেটের দেয়া অবস্থায় বসে ছিলাম। বাইকের পেছনে বউয়ের হেলমেট ঝুলছে। বেশ বড়সড় সাইজের হেলমেট। সেইফটি ফার্স্ট। বউ নাস্তা কিনতে গেছে। মেডিকেলের দিক থেকে উলটা পথে আসা রিকশা গুনছি। 

এক ভদ্রলোক শার্ট ইন করা ফর্মাল ড্রেসে, কালো রঙের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হন হন করে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাবার সময় জানতে চাইলেন, ভাই যাবেন নাকি? আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি তিনি আমাকে কিছু বলছেন। ফুলফেইস হেলমেট পরা আমার, পূর্বদিকের সূর্যের কারনে সান ভাইজর নামিয়ে রেখেছি। দ্বিতীয়বার, একটু সামনে গিয়ে তিনি আবার বললেন যাবেন না?

এবার আমি বুঝতে পেরেছি তিনি কি মিন করেছেন। আমি একটা হাসি দিলাম, কিছু বললাম না। তৃতীয়বার জিগ্যেস করার পর ভাইজর উঠিয়ে তাকে বললাম, না ভাই যাবো না। কিছুটা অবিশ্বাস নিয়ে তিনি সামনে চলে গেলেন।

বউ নাস্তা কিনে আসার পর তাকে বললাম, একটা ছেলে আমাকে জিগ্যেস করল যাবো নাকি। একটু দূরে গিয়েই দেখলাম তিনি এখনো হাঁটছেন। বাইক একটু স্লো করে পেছনে বসা বউকে দেখিয়ে বললাম, "ভাই, এই কারনে যাবো না।"

তিনি রসিকতা মনে হয় বুঝতে পারলেন। বললেন, স্যরি ভাই, আমি মনে করেছি আপনি রাইড শেয়ার করেন। আমিও হাসি মুখে সামনে রওনা দিলাম। 

ভাই যদি এই লেখা পড়ে থাকেন কিছু মনে করবেন না। কিছুটা হিউমার না থাকলে ঢাকা শহরের রাস্তায় বের হলেই মেজাজ খারাপ হবে।

সকাল বেলাতেই শাহবাগে জ্যাম কেন লেগে গেল বুঝলাম না! এটা একটা অসম্ভব রকমের উদাসীন শহর। আপনারা যারা নিয়ম করে সকাল বেলা ধোপদুরস্ত হয়ে বের হন, তাদের জন্য অনেক মায়া। সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়ায় এমন একটা প্রফেশনে আছি, আমাকে রাস্তা মাপতে হয় না। লেখালেখি করেই জীবন পার করে দিতে পারব আশা রাখি।

পাঠাও আপনাদের অনেকের  জন্য একটা নির্ভরযোগ্য বাহন এটা জানি। অনেকের পরিবার চলে একটা বাইকের উপর নির্ভর করে। এই শহরে নিজের গাড়ি এফোর্ড করাটা অনেকের পক্ষেই সম্ভব না। আমাদের শহরের জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তা অনেক অল্প, পাবলিক পরিবহনও নগন্য এবং জঘন্য।

চোখ কান খোলা রাখবেন সর্বদা। এবার আসেন কিছু টিপস দেই। পাঠাও বা ক্ষ্যাপ রাইড শেয়ার করা লোকদের কিভাবে চিনবেন। 

- এরা আমাদের মত শৌখিন বাইকারদের মত আরাম করে বসে থাকবে না। একটু পর পর কোমর বেঁকিয়ে সামনে পেছনে তাঁকাবে যাত্রির আশায়।
- আপনি বলার আগেই বেশিরভাগ সময় নিজের থেকে আপনাকে এপ বাদে ক্ষ্যাপ মারার আমন্ত্রন দেবে। আপনি শুধু সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন, ব্যাস।
- এদের বাইকের অবস্থাও নাজুক থাকবে।
- ৯০ ভাগের পায়ে রাইডিং সু অথবা হাতে গ্লাভস থাকবে না। স্যান্ডেলেই চলে যায়। কারন এদের পা টাইটেনিয়ামের তৈরি।
- জামাকাপড় কিছুটা মলিন থাকবে যেহেতু সারাদিন রোদে পুড়ে বাইক রাইড করতে হয়।

আর এর পরেও যদি চিনতে না পারেন, তবে তার নিজের মাথার এবং পিলিয়নের হেলমেটের দিকে নজর দিন। ময়লা অথবা স্ট্র্যাপ ছেড়া দেখবেন। অথবা ডিমের খোসার মত টোপলা হেলমেট দেখবেন।

আমরা সৌখিন বাইকররা বেশিরভাগ সময়েই ফুলফেইস এবং পরিস্কার দামি হেলমেট ব্যবহার করি। দামী বললাম এই কারনে, কারন মাথা বাঁচাতে হয়। আমাদের পিলিয়নের হেলমেটও বেশ দামি, দেখতে সুন্দর এবং বড়সড় হয়। দেখলেই বুজবেন এগুলো আছাড় দিয়েও আপনি ভাঙ্গতে পারবেন না।

এরপরও যদি কনফিউজ থাকেন, তবে আল্লাহ ভরসা। যেকোন বাইকের পিছনে উঠে বসেন। রাস্তায় এদের তাড়াহুড়া, তিড়িং বিড়িং আর ইন্ডিকেটর বিহীন চলাচল দেখলেই চিনে যাবেন। 

বিশদিন পর ঢাকার রাস্তায় বের হয়ে মনে হল, এইখানে চলতে হলে কোন কিছুতেই মাথা ঘামানো যাবে না। ঢাকার রাস্তার নিয়ম আর জঙ্গলের নিয়ম একই।





মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন