বই কেনা
যখন স্কুলে পড়তাম, তখন বই কেনার সামর্থ্য আমার খুব একটা ছিলনা। টিফিনের টাকা জমিয়ে যে কটা পারতাম কিনতাম। তখন আমাকে প্রতিদিন ৫ টাকা করে টিফিন দেয়া হত। সপ্তাহ শেষে ২৫ টাকা জমে যেত।
ঈদে বা অন্য সময় যখন কিছু বাড়তি টাকা পাওয়া যেত, সেটা সোনায় সোহাগা। একবার কোন এক আত্মীয় বাসায় এসে আমাকে ১০০ টাকা দিয়েছিলেন। আমি সেই টাকা দিয়ে বই কিনে এনে বাসায় বেদম মার খেয়েছি।
এমনকি কখনো টাকা কুড়িয়ে পেলে আমি সেটা জমিয়ে রাখার চেষ্টা করতাম।
পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমি খুব একটা স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসিনি। তবে প্রায় চল্লিশে এসে এখন আর আমাকে বই কেনার জন্য কারো কাছ থেকে ধার নিতে হয় না। মাসে এক বা দু'বার আমি শহরের পশ লাইব্রেরীতে ঢু মারি।

সেখানে এসি রুমে বই সাজানো থাকে। সাথে কফি আর স্ন্যাকস খাবার ব্যবস্থা আছে, আড্ডা দেবার সুযোগ থাকে। আমি সেখানে যাই, কিন্তু বই পড়ুয়ার থেকে বেশি দেখি কৃত্তিম সংস্কৃতি সচেতন মানুষ। এরা সময় কাটানোর জন্য আসে।
নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলো ছিলো আমার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। এখনও মাঝেমধ্যে সেখানে গেলে মন ভরে যায়।
একটা অদ্ভুত বিষয় হলো, কেউ আমাকে বই উপহার দেয় না। আমি প্রচন্ড বই পড়ুয়া এটা জানার পরেও কেউ আমাকে উপহার দিলে নানা রকম অদ্ভুত জিনিস উপহার দেয়। জামাকাপড়, পারফিউম, চকোলেট, হাবিজাবি ইত্যাদি । অথচ কেউ জানেই না, আমি বেশি খুশি হই বই উপহার পেলে।
কারন আমার আশেপাশে যারা আছেন, তারা বই পড়েন না। বই বাছাই করা একটা চরম যন্ত্রনাদায়ক প্রক্রিয়া। কোন লেখকের বই উপহারের জন্য কেনা উচিৎ সেটা নিয়ে চিন্তা করার মত সময় সবার নেই। ইণ্টারনেটের যুগে সেটা জানাটা সোজা হলেও, কেউ এই কষ্ট টুকু করতে চান না।
উপহারে পাওয়া বেশিরভাগ জামাকাপড়ই আমি পরি না। আমার পছন্দ হয়না।
অনলাইনে এখন বই বিক্রির একটা হিড়িক লেগেছে। আগে শুধু রকমারি ছিলো। রকমারি থেকে কিছু বই অর্ডার করতাম। এখন আর করি না।
বাংলাবাজার বুকস - নামে একটা ফেইসবুক পেইজ থেকে তারাশঙ্করের "কীর্তিহাটের কড়চা" অর্ডার করেছিলাম। তারা একমাসের বেশি হয়ে গেছে বই ডেলিভার করতে পারেনি। বই নাকি এখনও প্রকাশই হয়নি। কি অদ্ভুত!
আমার বাচ্চাটা বই পড়তে চায়না। তার কম্পিউটার আছে। আমি নিজেও বেশিরভাগ বিদেশী বই পড়ার জন্য একটা কিন্ডল কিনে নিয়েছে। আরামসে সেখানে হাজারখানেক বই নিয়ে ঘোরা যায়। তবে আমার রুমে বই ছড়ানো থাকে। আমার আশা বই দেখতে দেখতে একদিন বাচ্চাটা বইয়ের প্রেমে পড়ে যাবে।
আশেপাশের এত এত ব্যস্ত মানুষেরা বই পড়ে না। তাদের চিন্তাভাবনা নির্দিষ্ট একটা শেকলে বাঁধা থাকে, ভাবলেই আমার অস্বস্তি হয়। এরা বাঁচে কি করে?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন