বাংলাদেশ ২০২৪ - ২০২৫
খাবার খাওয়ার সময় আগে আমি মুভি দেখতাম। অনেক দিনের অভ্যাস। একটা মুভির চারভাগের একভাগ দেখে ফেলতাম দুপুর বা রাতের খাবার খেতে খেতে।
এখন আমি ইউটিউবে বাসি টকশো দেখি। যেহেতু পত্রিকা পড়ি না, টিভি দেখি না, তাই এই টকশো গুলোই হচ্ছে আমার দেশের পরিস্থিতি মাপার প্রধান উপায়। বিনোদনের সাথে সাথে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের এবং নিজের রাজনৈতিক জ্ঞান ঝালাই করা হয়ে যায় এই সময়ে।
মোটাদাগে, টকশো দেখে আর ফেইসবুক থেকে আমি বুঝতে পারছি "বর্তমান বাংলাদেশ" একটা অস্থিতিশীল দেশ। জনগন প্রচন্ড রকমভাবে রাজনীতি সচেতন হলেও তারা আদতে রাজনীতিতে অজ্ঞ। এখানে ইউটিউব আর ফেইসবুক সেলিব্রিটিদের একটা চরম প্রভাব আছে জনমত তৈরিতে। দেশের বাইরে বসে কিছু লোকজন অনবরত দেশ নিয়ে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে আর আমজনতা সেই ফাঁদে পা দিয়ে গন্ডগোল পাকাচ্ছে।
যে সুদিনের আশায় বিপ্লব হয়ে গেলো দেশে, একটা দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচনহীন সরকার সরে যেতে বাধ্য হল, সেই সুদিন আদতে আসেনি। যারা বিপ্লব করেছিল তারা নিজেরাই এখন স্বৈরশাসকের অসম্পূর্ন ভুমিকায় অভিনয় করতে চাইছে।
সবাই সংস্কার চাইছে, অন্তত সংস্কারের কথা বলছে। কিন্তু কারো মাথায় এটাই ঢোকে না- যে দেশে পনের বছর ধরে কোন সুষ্ঠ নির্বাচন হয় না, সেখানে সব দলের অংশগ্রহনে নির্বাচন হয়ে যাওয়াটাই একটা বড় ধরনের সংস্কার। আবার নির্বাচিত সরকার না হলে অনেক সংস্কারই মূল্যহীন হয়ে যাবে।
আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করার কথা শুনছি কদিন থেকে। ব্যাপরটা বেশ হাস্যকর লেগেছে আমার কাছে। স্বাধীনতার সরাসরি বিরোধীতা করা দল জামায়েতে ইসলাম যদি তিপান্ন বছর পরেও এদেশে রাজনীতি করে, তবে আওয়ামীলীগ এদেশে আরও অনেকদিন রাজনীতি করে যাবে। জনপ্রিয়তার দিক থেকে এদেশে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ এখনো শীর্ষে। শুধুমাত্র গলার জোরে চিৎকার করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনেছি বললেই সমন্বয়কেরা দেশের মালিক বনে যায় না। তাদের অহেতুক আস্ফালন তাই একসময় স্তিমিত হয়ে যেতে বাধ্য।
আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতার সাথে সরাসরি জড়িত দল, সে হিসেবেও ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে। এই বিপ্লবকে যুদ্ধ বলে চালানো গেলে হয়ত জামায়েতের মত আওয়ামী লীগকেও যুদ্ধাপরাধী বলে চালানো যাবে। এই আইডিয়াটা অবশ্য মন্দ না। কিছুদিন ধরেই স্বাধীনতার অনেক পরে জন্ম নেয়া শিবিরের ছেলেদের টকশোতে এসে বলতে শুনেছি ৭১ এর স্বাধীনতা আসলে ভুলে হয়েছে, ওটা ভারতের ষড়যন্ত্র ছিল। তারা এই স্বাধীনতা চায়নি।
যেহেতু ভারত সাহায্য করেছে তাই তারা এমনটা চায়নি বলে আসলে ৭১ এ জামায়েত ইসলামের ভূমিকাকে জায়েজ বানানোর একটা চেষ্টা করা হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, এরা যখন জন্মগ্রহন করেনি তখনকার যুদ্ধটা এদের চাওয়া না চাওয়াতে কি বদলানো যাবে? বৈজ্ঞানিক ভাবে তো না। গায়েবি উপায় আমার জানা নেই।
রাতারাতি উপদেষ্টা বনে যাওয়া একজন, যে অনেক বছর ছাত্রলীগের ডানার নিচে লুকিয়ে ছিল, সে তার বালক সুলভ চপলতায় বঙ্গবন্ধু কে জাতির জনক মানতে নারাজ। ব্যক্তিগতভাবে সে চাইলেই তা না মানতে পারে। এটা তার চিন্তার আর বাক-স্বাধীনতার বিষয়। কিন্তু শেখ মুজিব যখন বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন এবং যখন তাকে জাতির জনক উপাধি দেয়া হয় তখন এদের অনেকের জন্মই হয়নি।
এই ধরনের স্টেইটমেন্ট তাদের চিন্তার অপরিপক্কতা প্রকাশ করে।
পিনাকি নামে একজন ইউটিউবার এর প্ররোচনায় এরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুর করে গুড়িয়ে দেয়। এই পিনাকি একটা ইতর বিশেষ। খুব অদ্ভুত ভাবে হিন্দু ধর্মালম্বি হয়েও সে এদেশের মোল্লাদের ত্রাতা হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। কি সেলুকাস!
এই লোকটা ঔষধ কেলেংকারির সাথে জড়িত ছিল একসময়। প্রাক্তন শাহবাগী হিসেবেও তার সুনাম আছে। বাংলাদেশের মুমিন বান্দারা যেভাবে তাকে পীর হিসেবে মেনে নিয়েছে সেটা প্রমান করে এদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা আর চিন্তার অসুস্থতা চিরকালীন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আরো অনেক স্থাপনা ভাঙ্গা হয়েছে। এতে লাভ হয়েছে আওয়ামী লীগের। তাদের ভাষ্য সত্য বলে প্রমানিত হচ্ছে।
সাংবাদিক মাসুদ কামালের কথা আমি শুনি, এ লোকটা ফ্যাক্ট দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন। কার পক্ষে গেল তার ধার ধারেন না। তার ভাষা খুব মার্জিত। পিনাকির মত অশ্লীল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে তিনি যথেষ্ট পরিপক্ক।
আওয়ামী লীগ যখন ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে তখন যে তারা খুব আহামরি ভালো কিছু করে জিতে যায় এমনটা নয়। তারা ক্ষমতায় আসে বাকি দলগুলোর মূর্খের মত কাজকর্মে। এবার তৌহিদি জনতার উত্থান দেখে, দেশের মোল্লারা যে আদতে মৌলবাদি চিন্তা-ভাবনায় আচ্ছন্ন এবং আওয়ামী লীগ না থাকলে দেশটা জঙ্গিবাদে ভরে যাবে - এ ধরনের একটা ন্যারেটিভ ইতিমধ্যে দাঁড়া হয়ে গেছে সাধারনের মনে। "আগেই ভালো ছিলাম" - এই মনোভাবের লোকের সংখ্যা তাই দিনদিন বাড়ছে।
আরব বসন্তের পর পর সে দেশগুলোতে মৌলবাদের একটা উত্থান ঘটেছে। তারা কেউ ভালো নেই। বাংলাদেশ সেই পথেই হাঁটছে। এখানে বাক-স্বাধীনতার কথা বললেও সবাই অন্তরে একেকজন স্বৈরাচার।
আমাদের সমস্যা শিক্ষায়। ওয়াজ মাহফিল যাদের ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের উৎস, তাদের দিয়ে যেকোন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলানো সম্ভব।
ক্ষমতার শীর্ষে যারা থাকেন তারা সাধারনত একাকি হয়ে যান। আশেপাশে মোসাহেব ভরা থাকে। দেশের বাস্তব চিত্র বুঝতে পারেন না। আর হঠাৎ করে কেউ ক্ষমতা পেয়ে গেল সে সাধারনত স্বৈরাচারী হয়ে যায়। ইউনুস সরকার সেই পর্যায়ে আছে। এখান থেকে কিছুটা মান-সম্মান নিয়ে বেইল আউট করতে গেলে প্রফেসর ইউনুসের উচিৎ নির্বাচন দ্রুত দিয়ে গাধাদের শাসনভার তাদের নেতার হাতেই ছেড়ে দেয়া।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন