বইমেলা ২০২৫

২০২৫ এর বইমেলায় যাইনি। ঢাকায় ছিলাম অথচ বইমেলায় যেতে ইচ্ছে করেনি এটা আমার কোনদিন হয়নি। স্কুলে থাকতে বন্ধুদের নিয়ে যেতাম, কখনো একাই যেতাম আর পরে নিজের বাচ্চাকে সাথে নিয়ে গিয়েছি। আমি চাইতাম বই পড়ার বয়স না হলেও বাচ্চাটা দেখুক এই দেশে বই নামক জিনিসটার একটা মেলা হয়। মানুষ স্বেচ্ছায় সেখানে আসে- বই নেড়েচেড়ে দেখে, বই কেনে, গান হয়, ছবি আঁকে, আড্ডা হয়। জগতের ভালো জিনিসের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার একটা ইচ্ছা ছিল আমার।

এবার যাইনি দুটো কারনে, মেলাটা বইয়ের মেলা না হয়ে খাবারের মেলা হয়ে গিয়েছে আর সেখানে তৌহিদি জনতার আনাগোনা বেড়েছে। যারা জ্ঞান চর্চায় বাঁধা দেয়, তারা বইমেলায় কেন যায়? কোন লেখক কি লিখবে সেটা ঠিক করে দেয়ার দায়িত্ব কে কাকে দিয়েছে?

আপনি কি বই পড়বেন সেটা জোর করে কেউ আপনার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়ার জন্য আমি যেমন আপনাকে জোর করব না, আপনিও আমাকে জোর করবেন না আপনার অখাদ্য মতবাদ, বানান ভূল সর্বস্ব প্রেমের কবিতা বা রগরগে চটি গল্প পড়ার জন্য। তবুও আপনি লিখুন, প্রকাশ করুন। 

আমি চাই সবাই স্বাধীনভাবে লিখুক। সময় ঠিক করে দেবে কে টিকবে আর কে টিকবে না। আইন করে বই প্রকাশ অথবা বিক্রিতে বাঁধা দেয়া যাবে না। শিক্ষার মানদন্ডে আমরা এমনিতেই তলানির দিকের দেশ। পাঠ্যবইয়ের বাইরে এই সকল মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞান আর শিল্প সাহিত্যের বইয়ের মেলা তাই জাতির জন্য বাতিঘরের মত। সেটাই নিভে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

কোন প্রকাশক বা লেখকের উপর কোন কারনেই হামলা চালানো যাবে না। নৈতিকতার মানদন্ডে এবং রাষ্ট্রীয় আইনে কোনভাবেই এটা মেনে নেয়া যায় না।

বই প্রকাশ করা কি বাক-স্বাধীনতার অংশ নয়? এই রাষ্ট্রে বাক-স্বাধীনতা শুধুমাত্র একটা  কেতাবি কথা হয়ে গেছে। বিশ্ব যখন সামনের দিকে আগাচ্ছে, আমরা দৌড়াচ্ছি উল্টো দিকে।

বইমেলায় খাবারের দোকান দিয়ে ভরিয়ে ফেলাটা আরেকটা অসুস্থতা। এটা কর্পোরেট কালচারের অংশ, টাকা বানানোর ধান্দা। যারা বইমেলায় খাবার খেতে যায়, তারা বই কেনে না, বই পড়ে না। 

আমি কোন লেখকের বই না পড়েই তার সমালোচনা করি না, অথবা কারো লেখা ভালো বলি না। না পড়েই কাউকে বাতিলের দলে ফেলে দেয়ার আমি ঘোরতর বিরোধী। যুক্তির জবাব যুক্তিতে হবে, পেশীতে বা চাপাতিতে নয়।

কারো মতামতের বিরোধিতা করতে হলে লিখুন। তার আগে পড়ুন, জানুন। একটা সমাজের বৃহৎ অংশ যখন অজ্ঞানতার চর্চা করে, তখন সেখানে গণতন্ত্র, নৈতিকতা আর বাক-স্বাধীনতা টেকে না। যত বেশি পড়বেন তত বেশি পরমত সহিষ্ণুতা বাড়বে।

মেলায় যাইনি কিন্তু বই কিনেছি ঘরে বসেই। ফেইসবুক থেকে দূরে আছি এটাও একটা স্বাস্থ্যকর দিক। এ জায়গাটাও অস্বাস্থ্যকর সব জাদুকরী টোটকায় ভরে যাচ্ছে। সারাদিন গুজব আর মারামারির খবর। খুব বেশিক্ষন সহ্য করা যায় না।

বাংলাবাজার বুকস নামক একটা পেইজ থেকে বই অর্ডার করেছিলাম গত বছর। সেটা এই বছর ডেলিভারি দিয়েছে! ঠিক করেছি, আমি কোনদিন বই প্রকাশ করলে সেটা পিডিএফ হিসেবে বিলি করব অতি অবশ্যই। ছাপার অক্ষরের থেকে খরচ ও কম আর দ্রুত পাঠকের কাছে পৌছানো যাবে।

 

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন