Leave the table if respect is no longer served

সম্মান খুব ঠুনকো একটা জিনিস। কারন এটা ব্যক্তির নিজের উপর নির্ভর করে না। করে তার আশেপাশের মানুষের উপর, তার বসবাসকৃত সমাজের উপর। একজন লেখক যদি অশিক্ষিত একটা সমাজে বসবাস করেন, তবে তিনি খুব বেশি সম্মান পাবেন না। একজন বিজ্ঞানী যদি বাংলাদেশে বসে তার কাজ করেন তবে তিনি আশানুরুপ পুরষ্কৃত হবেন না। মেধাকে মূল্যায়ন করার মত মানসিকতা যদি আপনার আশেপাশের মানুষের না থাকে, তবে আপনার সৃষ্টিশীল কাজের জন্য কোন ধরনের সম্মান পাবেন না। 

এই কারনেই মেধাবীরা দেশে থাকতে চায় না। মেধাকে লালন-পালন করতে হয়, আদর যত্ন দিত্তে হয়, যেটা আমাদের সংস্কৃতিতে নাই। একটা সময় ছিল যখন রাজারা নিজেদের সভায় কবি-সাহিত্যিক, চিত্রকর, শিল্পী এদের বেতন দিয়ে লালন পালন করতেন। তাদের কাজ ছিল শুধু নিজের সময় আর মেধা ব্যয় করে নতুন সৃষ্টিশীল কাজ উপহার দেয়া। এই সকল মেধাবীদের লালন-পালন, নিরাপত্তা আর বাসস্থানের ব্যবস্থা রাজার তরফ থেকে করা হত। কেউ অসাধারন কোন কিছু নিয়ে রাজদরবারে এলে মিলত বিশাল অংকের পুরস্কার আর সম্মান। অসাধারন সব শিল্পকর্ম, সংগীত আর স্থাপত্য কর্মের সৃষ্টি হয়েছিল সেসময়।

সময় বদলেছে, শাসন ব্যবস্থার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান রাষ্ট্র মেধাবীদের লালন-পালন করে না। এখনকার বিজ্ঞানীরা, শিল্পীরা, স্থাপত্য কলাবিদরা কর্পোরেট বেনিয়াদের বেতনভুক। ফলে পুঁজিবাদী সমাজে সকল আবিষ্কারের পেটেন্ট করা হয়। ব্যবসায়িক ফায়দা লোটা হয়। মাঝেমধ্যে রাষ্ট্রের কোন দরকারে কিছুদিনের জন্য এদের ভাড়া করা হয়। এরা কাজ শেষে আবার নিজের প্রতিষ্ঠানে ফেরত যান। 

এই দেশের বেশিরভাগ কবি-সাহিত্যিক এবং শিক্ষকরা রাজনৈতিক দলের দাস। পদ-পদবি, পুরস্কার আর উচ্চতর বেতনের লোভে নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পদলেহনে ব্যস্ত থাকেন। ক্ষমতা কে খুশি রাখাতেই তাদের তুষ্টি। তারা তাদের মগজ বিক্রি করে দিয়েছেন জনপ্রিয় হবার ধান্দায়। আবার কিছু আছেন যারা মার খাবার ভয়ে চুপ করে থাকেন এবং রাষ্ট্রের সকল অনৈতিক কাজেরও বৈধতা দিয়ে থাকেন। এদের দিয়ে পৃথিবী বদলে দেয়া কোন দর্শন অথবা আবিষ্কার সম্ভব নয়।

এইরকম বুদ্ধিজীবী বা শিক্ষকদের যারা ছাত্র তারাও এই ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে যায় ছাত্রাবস্থায়। এরা জানে বর্তমানের বাংলাদেশে সম্মান পাওয়ার দুটো সহজ উপায় আছে- একটা হচ্ছে পয়সা বানালে, আরেকটা হচ্ছে সরকারি বড় চাকুরি করলে। কারন এইসব পদে গেলে ক্ষমতা এবং টাকা দুটোই পাওয়া যাবে। আর এই দুটোই আমাদের বর্তমান সমাজে সম্মানের মাপকাঠি। পড়াশোনা শেষ করে তাই সবার একমাত্র লক্ষ্য থাকে বড় সরকারি চাকরি অথবা বিসিএস ক্যাডার হওয়া।

আমাদের সমাজে একটা কথা খুব প্রচলিত- "নিজের সম্মান, নিজের কাছে।" মানে আপনাকে আপনার সম্মান রক্ষা করতে হবে। অন্য কেউ সেটা রক্ষার চেষ্টা করবে না। বরঞ্চ তারা সবসময় চেষ্টায় থাকবে কিভাবে আপনাকে ছোট দেখানো যায়। যাদের মেধা বা স্কিল নেই, তারা মেধাবীকে ছোট করে নিজেরা বড় হতে চায়। যেহেতু একটা দেশের বেশিরভাগ জনগণ অজ্ঞানতার চর্চা করে, জ্ঞানের দিক থেকে পিছিয়ে আছে। তাদের মূল কাজ থাকে বুদ্ধিজীবী সমাজের কাউকে দেখলেই তাকে ছোট করে দেখা। শোরগোল করে তার কণ্ঠরোধ করা। তাতে যদি নিজেকে কিছুটা জ্ঞানী বলে জাহির করা যায়।

এই কারনে মেধাবীরা যখন দেশ ছেড়ে চলে যায়, আমি দোষের কিছু দেখি না। যৌক্তিক হচ্ছে যখন বুঝবে একটা জায়গায় তোমার কাজের বা মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না, তখন যত দ্রুত পারো সেই স্থান ত্যাগ করবে। গোলাপের মূল্য, সৌন্দর্য আর ঘ্রান ফুল প্রেমির কাছে হয়। যাদের নাকে গোলাপের গন্ধ পৌছায় না, যাদের মাথাভর্তি নর্দমার মত চিন্তা-ভাবনা, তারা গোলাপের মূল্য দেবে না।

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন