আমার পতাকা, আমার লাল সবুজ
ভালো থাকুক তারার সন্তানেরা, এই নক্ষত্রের নিচে।
মানুষ নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করতেই পারে। হয়ত বনের হরিণেরাও তাই করে। যেহেতু আমরা কেউ কারো ভাষা বুঝি না, তাই এই দাবিতে কোন ধরনের বাদ-বিবাদ ঘটে না।
মানুষের এই দাবি করার পেছনে কিছু অত্যাবশ্যকীয় কারন রয়েছে। একমাত্র আমরাই প্রাণীজগতের মধ্যে সভ্যতা গড়ে তুলেছি। দু'পায়ে হাঁটার ক্ষমতা অর্জনের সাথে সাথে আমাদের হাতগুলো মুক্ত হয়েছে। হাতের ব্যবহার আমাদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে।
আমাদের মস্তিষ্কও দেহের তুলনায় অন্যান্য প্রানীদের থেকে বড়। জটিল চিন্তাভাবনা যেমন ভাষার ব্যবহার এবং একসাথে কাজ করে কোন বিশাল স্থাপনা সৃষ্টি ইত্যাদি আমরাই করতে পারি।
ভ্রমন, খেলাধুলা, সামাজিক আচার পালন এবং জীবন উপভোগেও আমরা অন্যান্য প্রানীদের ছাড়িয়ে গেছি। খাদ্য গ্রহন করে প্রজাতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখা বাদেও আমরা নানা ধরনের অহেতুক কাজ করি। অতএব আমরা শ্রেষ্ঠ।
এই শ্রেষ্ঠ মানুষই কিছু আবার জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজগুলোর একটা করে। সে অন্য প্রানীদের হত্যা করে। এমনকি নিজ প্রজাতিকেও সে হত্যা করে।
বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমান মানুষেরা হচ্ছে সাত নম্বর প্রজাতি। এর আগের ছয়টি টিকে থাকতে পারেনি। আমাদের পূর্বপুরুষ নিয়ানডার্থাল (Neanderthals) কে নাকি আমরাই হত্যা করেছি। যদিও এটা পেলিওএন্থ্রোপলজির বিষয়। আর এ ব্যপারে আমার জ্ঞান কিঞ্চিত দুর্বল।
তবে মানুষের ইতিহাস যতদূর পর্যন্ত লেখা আছে, সেখানে নানা সময়ে নানা কারনে এবং অকারনে মানুষেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে এবং একে অন্যকে হত্যা করেছে। কখনো দেশপ্রেমের নাম করে আবার কখনো ধর্মের কারনে। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি তাই মাঝে মাঝে খুব অকিঞ্চিৎকর মনে হতে পারে। আপনি সিরিয়া কিংবা ফিলিস্তিনের মানুষদের জিগ্যেস করুন, কারা তাদেরকে খুন করছে? অন্য গ্রহের প্রাণী, নাকি এই গ্রহের অন্য প্রাণীরা?
উত্তর হচ্ছে, মানুষ।
মানুষ নিজেরাই আইন বানায়, বর্ডার বানিয়ে নিজেদের খাঁচার ভেতরে আরো সংকীর্ন করে এবং সম্পদের অপ্রতুলতা নিয়ে যুদ্ধ করে। এটা প্রাকৃতিক নিয়মে হচ্ছে এবং সামনেও হবে। পৃথিবীর তাবৎ জায়গায় যদি মানুষকে সমানভাবে থাকতে দেয়া হয় আর খাদ্যেরও অভাব না থাকে, তবুও এরা বিভিন্ন গল্প বানিয়ে একে অপরকে খুন করবে।
প্রযুক্তি জ্ঞানের উৎকর্ষতায় খুন করার পদ্বতি এবং সংখ্যা পরিবর্তিত হয়। চেঙ্গিস খান এক বছরে যত মানুষ মেরেছে, এখনকার মোটামুটি শক্তিশালী যে কোন বোমা একটা শহরের উপর ফেলে তার থেকে বেশি মানুষ মেরে ফেলা সম্ভব।
আদিকাল থেকেই টিকে থাকার জন্য মানুষকে হিংস্রতা দেখাতে হয়েছে। অন্যরা যেখানে শুধু মাত্র খাবারের জন্য খুন করত, সেখানে মানুষ নিছক আনন্দের জন্যও খুন করে। মাঝেমধ্যে কারো গল্প পছন্দ না হলে তাকেও খুন করে। রোম সাম্রাজ্যে এম্ফিথিয়েটার বানিয়ে মানুষ কিভাবে মানুষকে হত্যা করে, সেটা লোকজন রীতিমত আনন্দ উল্লাস করে দেখত।
আমাদের রক্তেই খুনের নেশা আছে। কারুর ধর্ম পছন্দ না হলে তাকে খুন করা যায়। অন্যের বাসস্থানকে নিজের বলে দাবি করে খুন করা সম্ভব। রাজনৈতিক ক্ষমতা পালাবদলের জন্য মানুষের লাশ দরকার। আমাদের যেকোন বিপ্লবকে মহিমান্বিত করার জন্য আমরা রক্ত নিতে চাই, দিতে চাই।
অথচ আমরা নিজেদের বুদ্ধিমান দাবি করি। শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের জন্য নিজেদের মহাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু মনে করি।
বিজ্ঞানের সোজাসাপটা কথা হচ্ছে, যেহেতু মানুষ সবচেয়ে বেশি শক্তি অপচয় করে বা ছড়াতে পারে তাই মানুষকে কে খাদ্যশৃঙ্খলের উপরে স্থান দেয়া হয়েছে। আমরা পুঞ্জীভূত শক্তিকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছি। মহাবিশ্বের সব জায়গায় শক্তি সমানভাবে ছড়িয়ে পড়লে গ্রহে গ্রহে প্রজাতির উদ্ভব বন্ধ হয়ে যাবে।
এটা বোঝা অবশ্য বেশ দূরহ একটা কাজ হবে। কারন দর্শন আর বিজ্ঞান এখানে মিলে মিশে একাকার। আমরা এখন আর দুটোকে এক করে দেখি না। আধুনিক যুগে দার্শনিকের তেমন কোন সম্মানও নেই।
তবে প্রকৃতির একটা সাধারণ দর্শন হচ্ছে, যে প্রানী তুমি খাবে না, তাকে হত্যা করবে না।
তোমার আর আমার দুজনের হাতে যদি বন্দুক থাকে তবে আমরা আইন নিয়ে কথা বলতে পারি।
তোমার আর আমার দুজনের হাতেই যদি ছুরি থাকে তবে আমরা নিয়ম নিয়ে কথা বলতে পারি।
তুমি আমি দুজনেই যদি খালি হাতে আসি তবে আমরা যুক্তি নিয়ে কথা বলতে পারি।
কিন্তু তোমার হাতে বন্দুক আর আমার হাতে ছুরি থাকলে, তুমি যা বলবে সেটাই সত্যি।
আর তুমি বন্দুক নিয়ে আসলে যদি আমি খালি হাতে থাকি, তবে তুমি শুধু অস্ত্র নিয়ে আসোনি, আমার জীবন তোমার হাতে।
আইন, নিয়ম এবং নৈতিকতার ধারনা তখনই কাজ করে যখন এরা সমতার ভিত্তিতে তৈরি হয়।
জগতের নির্মম সত্য হচ্ছে যেখানে টাকা কথা বলে সেখানে সত্য নিশ্চুপ হয়ে যায়। আর যখন ক্ষমতা কথা বলে তখন টাকাও তিনপা পিছিয়ে যায়। যারা আইন তৈরি করে বেশিরভাগ সময়ে তারাই প্রথমে আইন ভাঙে। আইন হচ্ছে দুর্বলের পায়ে শেকলের মত আর ক্ষমতাবানের জন্য হাতিয়ার।
পৃথিবীতে যা কিছু ভালো তার জন্য লড়াই করাতে দোষের কিছু নেই। ক্ষমতাবানেরা সবাই সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা করছে, আর দূর্বলেরা অলস বসে থাকে সেই সম্পদের ভাগ পাবার জন্য।
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের পরে দেশের কোন কিছুই ঠিক মত যাচ্ছে না। প্রথম কয়েকদিন নব বিবাহিত দম্পতির মত সবাই খুব প্রশংসা করলেও, বিপ্লবের ক্ষত কোনভাবেই মুছে ফেলা যাচ্ছে না। ইউনুস একজন চৌকস ব্যবসায়ী হলেও কার্যত তিনি প্রশাসন চালাতে ব্যার্থ হচ্ছেন।
ক্ষমতার মূল জিনিস হচ্ছে তা প্রয়োগ করতে হয়। অনেক ক্ষমতা নিয়ে বসে থাকলে বা লোকে কি বলবে এই লজ্জা করলে দেশ চালানো যাবে না। সবাইকে খুশি করতে গেলেও নেতা হওয়া যায় না। সেই হিসেবে ইউনুস সরকারের ক্ষমতা মনে হচ্ছে খুব কম।
নভেম্বরে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে। এক কলেজ আরেক কলেজের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে গেছে। কলেজ ভাংচুরেরর পর শিক্ষার্থীরা যা কিছু পাচ্ছে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এর আগেই অটোরিকশা চালকেরা আন্দোলনে নেমেছে। তারাও রাস্তায় মারামারি করছে। তারাও অবৈধ বাহন স্বাধীনভাবে চালাতে চায়।
ঢাকায় মূলত প্রতিদিনই কিছু না কিছু সহিংসতা হচ্ছে। পুলিশ আর আর্মি হার্ড লাইনে যাচ্ছে না। আর্মির ব্যপারটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এরা চাইলে হয়ত অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারত, কিন্তু কেন যেন সেই সদিচ্ছাটা দেখতে পাচ্ছি না।
আজকে আবার দেখতে পেলাম হিন্দু-মুসলিম একটা দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা চলছে। আদালত চত্বরে গন্ডগোলের পর, আদালতের বাইরে সরকারি এক আইনজীবিকে হত্যা করা হয়েছে। ইসকনের একজন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায়। সনাতন ধর্মালম্বীরা আন্দোলনে নেমেছে।
এইখানে একটা ব্যাক্তিগত অবজারভেশন এর কথা বলি, ইসকনের এই লোককে আমি চিনতাম না। হঠাৎ করে ফেইসবুক রিলে তার একটা ভিডিও দেখি। এখন এইসব ভিডিও বেশ চলছে। সেখানে তিনি হিন্দুদের কোন একটা সভায়, জনসংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেকটা মুসলমানদের ওয়াজিয়ান বক্তাদের মত। কি সেলুকাস! একটা দেশের মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোয়ালিটির থেকে কোয়ান্টিটির দিকে যেতে উপদেশ দেয়। কি অথর্ব আর নিন্মশ্রেনীর চিন্তা। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ সবার চিন্তা ভাবনা একইরকম।
মূলত দেশকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা কার্যত দৃশ্যমান এখন। ছাত্ররা জাতির ভবিষ্যত - এই কথাটা এজন্যই বলা যে এরা বড় হয়ে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশের বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব নেবে। মব ভায়োলেন্সে উৎসাহিত একদল তরুণের কাছে কোন ধরনের দায়িত্ব দেয়া মূর্খতা। এদের শিক্ষা সমাপ্ত হয়নি, এবং এদের অভিজ্ঞতা শুধুই প্রতিহিংসার।
এরাই যদি আগামী দিনের দেশের ভবিষ্যত হয়। তবে সামনে শুধুই রক্তাক্ত দিন।
দেশ চালানোর জন্য একটা মাসল পাওয়ার দরকার হয়। কে সেই দায়িত্ব নেবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আবার শুধু মাসল পাওয়ার হলেই হবে না। সেই ক্ষমতাকে সমীহ করার লোকও থাকতে হবে। পুলিশের সাথে আগষ্টে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর, এরা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বাঙালি এমনিতেই উচ্ছৃঙ্খল জাতি - এখন ভয় ভেঙে এরা যত্র তত্র মব ভায়োলেন্সে সব সমস্যার সমাধান চাইছে।
এটাকেই যদি স্বাধীনতা আর গণতন্ত্র বলে, তবে এদেশটা খুব দ্রুত ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে। ধর্ম একটা বিশাল পলিটিক্যাল ট্রাম কার্ড এই উপমহাদেশে। বাংলাদেশের অশিক্ষিত জনগনের উপর সেটা প্রবলভাবে প্রয়োগের চেষ্টা চলছে।
খুব শিগ্রই আরেকটি বিপ্লব অথবা গৃহযুদ্ধের আশংকা করছি। নয়ত দৃশ্যপটে কেউ একজন এসে বলতে পারে, মার্শাল ল' জারি করা হলো। অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারফিউ।
কালকে রাতে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। রাত তখন সাড়ে ন'টা বাজে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বৃষ্টি হলে সাধারণত আমি ফ্যান লাইট বন্ধ করে বারান্দার দিকের দরজাটা খুলে দেই। ঝুম ঝুম একটা শব্দ নামে আমার ঘরে। সাথে ভেজা একটা বাতাস এসে মন ভরিয়ে দেয়।
অনেক অনেক পুরনো স্মৃতিরা ঘিরে ধরে এসময় আমাকে। আমি এই সময়টার নাম দিয়েছে "ইচ্ছে পূরণ"। যা খুশি ভেবে নেয়া যায় তখন। মন ভালো থাকলে কবিতার দুএকটা পংক্তিও মাথায় আসে।
খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু রেঁধে দেবার লোক নেই। নিজের রান্না করতে হবে বলে সেই ইচ্ছেটাকে মাটি দিলাম। একটা চা বানিয়ে আবার চেয়ারে এসে বসেছি। কিন্তু চা খেতেও ভুলে গেছি। এই বৃষ্টির পরে ঢাকায় ঠান্ডা নামতে পারে। এই নভেম্বরে আগে যেখানে হাঁড় কাপানো ঠান্ডা ছিল, এখন সেখানে এসি ছেড়ে রাখতে হয়।
স্কুলে যখন পড়তাম তখন এসময়টা আমার বড়ই আনন্দে যেত। আমাদের বুয়েট স্কুলটা বেশ খোলামেলা, সাথে একটা মাঠও ছিল। ক্লাসের জানালা দিয়ে সোনালি রঙের রোদ এসে পড়ত বেঞ্চের উপর, আমার মুখে। আমার নজর থাকত কখন টিফিনের ঘন্টা দেবে। খুব বেশি পড়ুয়াদের দলে আমি ছিলাম না। গল্পের বই আর কমিক্সেই আমার মন পড়ে থাকত সবসময়। অনেক বেশি বন্ধুও বানাতে পারিনি। তবে দু'জন বন্ধু এখনও টিকে আছে। জীবনের দৌড়ে আমাদের এই তিনজনের একজনও চাকরি-বাকরি কিছু করি না। তবুও বেশ ভালো জীবন কেটে যাচ্ছে।
পড়াশোনাটা শুধু চিন্তার বিকাশের জন্য। আমাদের মনে হয় সেটা হয়েছে। আমরা শুধু পাশ করার জন্য আর চাকরি করার জন্য পড়িনি। তোমরা এখন কিসের জন্য পড়ছ?
ফেইসবুকে ভিডিও দেখেছি, নতুন স্বাধীনতার নাম করে শিক্ষকদের পদত্যাগ করানো হয়েছে। অত্যন্ত অসভ্য ভাবে এবং কুৎসিত উপায়ে। ছোট ছোট বাচ্চাদের আন্দোলন করতে দেখেছি, যাদের মাথায় বিপ্লব মানেই অসভ্যতা ঢুকে গেছে। তোমরা কিসের জন্য পড়াশোনা করছ?
একদল দেখলাম আন্দোলন করছে পরীক্ষার সিলেবাস কমানোর জন্য, আরেকদল অটো পাশ চায়। কেউ আবার রাস্তা বন্ধ করে চাইছে তাদের কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়া হোক সেজন্য! তোমরা আসলে কিসের জন্য পড়ছ?
এই জনপদটা অসভ্য লোকজনে ভরা। এখানে শিক্ষার বারোটা-তেরোটা অনেক আগেই বেজে গেছে। কয়দিন পরপরই সবাই রাস্তা বন্ধ করে অন্যের সময়ের ক্ষতি করে শুধুমাত্র নিজের দাবি আদায়ের জন্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝখান দিয়ে গতকাল বাসায় ফেরার সময় তাবলিগ গ্রুপের স্মরনকালের সবথেকে বড় সমাবেশ এর মাঝখানে পড়ে গেলাম। প্রায় দুই ঘন্টা লাগল এই জায়গা থেকে বের হতে। আমার এই জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এইরকম উজবুকি কান্ড আর দেখিনি। রাস্তায় সারি সারি বাস এনেছে এরা। সারাটা রাস্তা কলার খোসা আর পলিথিনে মোড়ানো খিচুড়ি ফেলা। মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে দেয়া রেলিং টপকে, গাছের পাতা ছিড়ে মাদ্রাসা ছাত্ররা অবাধে পার হচ্ছে।
আমার তখন মনে পড়ল নৈতিকতা শিক্ষা থেকে আসে, আমাদের স্কুল এবং মাদ্রাসাগুলো দুই জায়গাতেই এই শিক্ষাটা ব্যার্থ হয়েছে। আগে আওয়ামীলীগের লোকজন টোকাই ভাড়া করে আনত এখন মাদ্রাসা ছাত্রদের হাতে আলকায়েদার পতাকা ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে, সমাবেশে বাস ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে। নগর জুড়ে নিষিদ্ধ সংগঠনের পোস্টার। জেন-জি জেনারেশন তোমাদের আইডল কারা?
তোমরা কি জানো দেশকে কতদিন পিছিয়ে দিয়েছ তোমরা। যে বাকস্বাধীনতার কথা তোমরা বল, সেটা কোথায়? তোমাদের পক্ষে না থাকলে সবাই আওয়ামীলীগ? এই ধরনের বুদ্ধি নিয়ে তোমরা দেশ চালাতে চাইছ? তোমরা অটো পাশ জেনারেশন বলায় রাগ করো কিসের জন্য? তোমরাতো আদতে সেই দাবিতেই মাঠে নামো।
আগেও কেউ ভালো ছিলো না, এখনো কেউ ভালো নেই, ভালো থাকার সম্ভাবনাও দেখছি না।
ঢাকা একটা ব্যর্থ নগরীতে পরিণত হয়েছে। যার যা কিছু দাবি আছে, আন্দোলন আছে, সব ঢাকার মূল পয়েন্টে এসেই করতে হয়। যান চলাচলের রাস্তাকে রাজপথ নাম দিয়ে সবাই রাজপথের লড়াকু সৈনিক হতে চায়। যদি রাজাই না থাকে, তবে কিসের রাজপথ? কার রাজত্ব?
পৃথিবীর কোন দেশে এই রকম অসভ্যতা চলে রাস্তা জুড়ে? কারা স্কুল ছেড়ে রাস্তায় নামে আবেগ পুঁজি করে? কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না করে, ল্যাবে রিসার্চ করা বাদ দিয়ে রাজনীতি করে? এত এত বিপ্লব কেন করতে হয় বারবার?
বিজ্ঞান, সাহিত্য আর সংগীতে বুঁদ হয়ে থাকার কথা যে সময়টায়, তখন তোমরা কি করছ? তোমরা কিসের জন্য পড়াশোনা কর? দেশের জন্য যে করোনা সেটা নিশ্চিত। তোমরা যাদের আইডল মানো তাদের অতীত আর বর্তমান অবস্থা দেখেছ?
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা ব্যর্থ, আমাদের গণতন্ত্র একারনেই কাজ করে না। আরও পঞ্চাশ বছরেও কাজ করবে বলে মনে করছি না। যা কিছু সুন্দর তা নষ্ট করে যদি দাবি আদায় করতে হয় তবে জেনে নিও, ভূল হয়ে গেছে। কোথাও একটা বড় ভূল হয়ে আছে।
ডারউইন সাহেব একটা সাধারণ পূর্বপুরুষের কথা বলে ধরা খেয়ে গেছেন তাবৎ ঈশ্বরপ্রেমী মানুষের কাছে। বুঝে না বুঝে লোকটাকে হেয় করা হচ্ছে প্রায় দুইশ বছর ধরে।
কিন্তু আচরনগত দিক থেকে আমি খুব সাদৃশ্য পাই, মানুষ আর বানরের মাঝে। এদেরকে একটু আদর দেখালেই মাথায় উঠে বসে।
মাথা থেকে নামাতে হলে আছাড় দিতে হয়।