পোস্টগুলি

স্কুল যেমন হতে হয়

স্কুলে আমরা বাচ্চাদের পাঠাই শিক্ষা গ্রহন করবার জন্য। স্কুল একটা বাচ্চার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম ধাপ। কিন্তু আমরা কি জানি একটা স্কুল কেমন হতে হয়? অথবা আদর্শ স্কুল বলতে কি বোঝায়?

বাচ্চার স্কুলে দিনে দুবার যেতে হয় আমাকে। সকালে তাকে দিয়ে আসি, আবার দুপুরের একটু আগে তাকে গিয়ে নিয়ে আসি। মাঝখানের সময়টা নিজের কিছু কাজ করে নিতে পারি। স্কুল থেকে বাচ্চাকে আনতে গেলে সেখানে বেশ কিছু সময় আমি ব্যয় করি। আমার কাছে স্কুল ব্যাগ দিয়ে সে কিছুটা সময় মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে। 

আমি নিজে যেই স্কুলে পড়তাম সেখানেও একটা মাঠ ছিল। যদিও ছুটির পরে সেখানে আমরা খেলতাম না। আমাদের খেলার জন্য কোয়ার্টারে বিশাল ২ টা মাঠ ছিল। কালে ভদ্রে স্কুল মাঠে খেলা হত। সকালের পিটি/সমাবেশ স্কুল মাঠে হত।

 

যে স্কুলে ক্লাস থেকে বের হয়ে বাচ্চারা সবুজ মাঠ দেখতে পায় না, ছুটির পরে ঘাসের উপর বসে একটু সময় আড্ডা দেয়া যায় না, সেটা কোন স্কুল নয়। একটা বাধ্যতামূলক নিয়ম করা দরকার আমাদের দেশে, যেখানে খেলার মাঠ নেই সেখানে স্কুল থাকবে না। একটা বিল্ডিং এর মাঝে কিছু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র লাগিয়ে দিয়ে সেটাকে স্কুল নাম দেয়া যাবে না।

স্কুলে আমতলা থাকতে হবে, বকুল ফুলের গাছ থাকতে হবে। বৃষ্টির দিনে যেন ঝুমঝুম শব্দ শোনা যায় এরকম কিছু টিনের চাল থাকতে হবে। বর্ষায় কাদামাটি মাখার জায়গা থাকতে হবে, ফুলের বাগান থাকতে হবে। তবেই সেটাকে আদর্শ স্কুল বলা চলে। একটা শিশু যেন স্কুলে গেলে অ্যাডভেঞ্চারের অনুভুতি পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

দশম শ্রেণী পাশ করেই কেউ বিদ্যার জাহাজ হয়ে যায় না। এই সময়টা তার চরিত্র আর স্মৃতি গড়ে ওঠার সময়। তাই স্কুলে এমন একটা পরিবেশ থাকা দরকার যেখানে মাটির গন্ধ লেগে আছে, ফুল, পাখি আর মমতার ছোঁয়া আছে।

স্কুলে গিয়ে যেন শিশুর মনে না হয় সে জেলখানায় আছে। স্কুল পাশ করার বহু বছর পরও যেন স্মৃতি হাতড়ে সে বলতে পারে, "আমার স্কুল, আমার শৈশব।"

আমরা বিদ্যা অর্জনের মূল লক্ষ্য জলাঞ্জলি দিয়ে পরীক্ষার নম্বর আর সার্টিফিকেটের পেছনে দৌড়াই। খুব ভুল একটা জীবনে ঠেলে দেই আমাদের শিশুদের। এরপর বড় হলে তার কাছ থেকে কি আশা করতে পারেন আপনি?

ভালো শিক্ষকের পাশাপাশি একটা সবুজ পরিবেশ না থাকলে, সেটা শুধুই একটা কোচিং সেন্টার, কোনভাবেই স্কুলে বলা চলে না।

 

ব্যক্তিগত তথ্য

লেখালেখি করে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা বাদে আমি খুব নিভৃতে থাকা মানুষ। আমি লোকজনের সাথে খুব একটা মিশতে চাইনা। যতবারই সোশ্যালাইজিং করার চেষ্টা করেছি, মানুষের অহংকার আর ভয়ংকর রকমের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় তাদের সাথে মিশতে আমাকে বাধা দিয়েছে।

আমি ধনী-গরীব, উঁচু সরকারি বা রাজনৈতিক পদ, সামাজিক স্ট্যাটাস দেখে আড্ডা দেই না। শুধু নির্বোধের সাথে আড্ডা দিতে আমার আপত্তি আছে।

বাচ্চার স্কুলের সামনে এক ভদ্রলোক সেদিন আমাকে হটাত করে বললেন আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি দেখেছি মনে হচ্ছে। আমি নির্লিপ্তভাবে বললাম, এখানেই দেখেছেন। বাচ্চাকে নিতে আসি, দিতে আসি। 

এরপর তিনি জানতে চাইলেন, আপনি থাকেন কোথায়? এই ভদ্রলোকের সাথে আজকেই আমার প্রথম দেখা। আমার স্মৃতিশক্তি এতই খারাপ নয় যে তাকে আগে দেখে থাকলে ভুলে যাবো।

আমি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললাম, ভাই এত কিছু জানার কি দরকার? এরপর আপনি, জানতে চাইবেন, আমি কি করি, আমার বাচ্চাকাচ্চা কয়জন, বউ কি করে, কয় ভাই-বোন আমরা... কি দরকার এত অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে। 

তার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। আমি গ্রাহ্য করলাম না। একটা বয়সের পর মানুষ আর শেখে না। কিছুটা অপমান করে যদি এদের মাথায় ঢোকানো যায় অন্যের ব্যাপারে নাক গলানোটো ভদ্রতার পরিচয় নয়।

পাশেই আমার এক বন্ধুর মেয়ে ছিলো। তাকে শুনিয়ে শুনিয়েই আমি বললাম, শোনো মা, তুমি এখন থেকেই শেখো, কেউ বিনা কারনে প্রশ্ন করে তোমার ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাইলে তাকে সরাসরি না বলবে। আর কাউকে নিজের গায়ে হাত দিয়ে আদর করতে দেবে না। সে তোমার বাবার যত কাছের বন্ধুই হোক।

মানুষ তার স্বভাবেই অন্যের ব্যাপারে কৌতূহলী। কিন্তু একজন ব্যাস্ত মানুষ সেই কৌতূহল নিবৃত্ত করে তার নিজের কাজে মনোযোগ দেন। আরেকজনের জীবনে কি ঘটছে সেটা নিয়ে গালগল্প করার মানে আপনার নিজের জীবনে কোন ধরনের আনন্দ নেই, উত্তেজনা নেই। সেটার ঘাটতি কাটাতে আপনার অন্যের বিষয়ে ছোঁকছোক করতে হয়।

আগে আমার ধারনা ছিল এই কাজটা শুধু মেয়েরাই করে। এখন দেখলাম ছেলে মানুষেরও এই স্বভাব আছে। অদ্ভুতভাবে এরকম স্বভাবের যাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে তাদের সবাই ধার্মিক লেবাস পরে ছিলেন।

আমরা বাঙ্গালীরা বুঝতেই চাইনা নিজের তথ্য সহজে কাউকে দিতে হয় না। আপনার বাসার ঠিকানা, এনআইডি নম্বর, পাসপোর্টের তথ্য, ব্যাংকিং ইনফরমেশন, পরিবারের সদস্যদের ছবি, ইত্যাদি সবই খুব সেনসিটিভ তথ্য বহন করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এগুলোর যথেচ্ছা ব্যবহার ঝামেলা বাদে ভালো কিছু ডেকে আনে না।

এখনতো অনেকে তাদের বেডরুমের খবর পর্যন্ত ভ্লগিং এর নামে অনলাইনে ছড়াচ্ছেন। স্বস্তা জনপ্রিয়তার লোভে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন নিজের প্রাইভেসির শেষ অংশটুকু।

আমি পারতপক্ষে কাউকে আমার ফোন নম্বরও দিতে চাই না। অহেতুক মোবাইলে কথা বলাটা আমার কাছে একটা বিরক্তিকর বিষয়।

রেষ্টুরেন্টে খেতে গেলে বা দোকানে কিছু কিনতে গেলে মেম্বারশিপের নামে এরা নম্বর চায়। আমি দেই না। দিলেও এমন একটা নম্বর দেই যেটা আমি ব্যবহার করি না। আমার কোন দরকার নেই সারাদিন তাদের প্রমোশনাল মেসেজ আর ফোন কল রিসিভ করার।

এরপরও নানা কারনে আমাকে অনেক নির্বোধের কাছে নিজের তথ্য দিতে হয়েছে। যেটা আমার খুবই অপছন্দের ছিল এবং আমি জানি এগুলোর বাজে ব্যবহার হবে। যথাসম্ভব এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছি পারিনি। নির্বোধের কাছে নিজের গোপনীয় তথ্য দামি না হতে পারে কিন্তু আমি চেষ্টা করেও এই ব্যপারে নির্বোধ হতে পারছি না।

বাসায় বুয়া/হোম মেইড রাখার যে "বাঙালি" সংস্কৃতি সেটাও আমার পছন্দের না। আমি এখনও নিজের রান্না নিজে করতে পারি, অনালাইনে অর্ডার করতে পারি সময় না থাকলে। প্রযুক্তির সহায়তা থাকায় কাপড় ধোয়ার কাজেও সময় নষ্ট করতে হয়না। যেহেতু চব্বিশ ঘন্টার বিশ ঘন্টা আমি বাসায় থাকতে পারি, অন্যদের মত রাস্তার জ্যাম আর মানুষ ঠেলে, ধুলোবালি খেয়ে আমাকে অফিস করতে হয় না, তাই যথেষ্ট সময় থাকে নিজের কাজ নিজে করার।

বুয়া কালচার আমার অপছন্দ কারন এদের লাই দিলেই মাথায় ওঠে এবং ভাল ব্যবহার করলে তার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। সবচেয়ে বড় কথা এদের প্রবেশ আমার শোবার ঘর পর্যন্ত, খুব কাছের মানুষ না হলে যেখানে আমি কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেই না এবং এরা এক বাসার খবর আরেক বাসায় গিয়ে বলে, যেটা আমার খুবই অপছন্দের। 

যেই কাজ আমি নিজে করতে পারি সেটা অন্যকে দিয়ে করানোর আমি কোন মানে দেখি না। সবচেয়ে বড় কথা যেহেতু আমি বাসায় বসে কাজ করি, কাজের লোক বাসায় আসা মানে আমার দিনের একঘন্টা সময় নষ্ট হওয়া এবং লেখালেখিতে একটা অহেতুক বিরতি পড়া। এই বিরতি আমার বিশ্রাম এবং লেখার কাজে বাধ সাধে। এর থেকে নিজে কিছু কায়িক শ্রম করাটা আমার কাছে উত্তম মনে হয়।

যাদের আমরা উন্নত বিশ্ব বলি, যাদের দেশের ভিসা পেলে বাঙ্গালীর স্বর্গসুখ অনুভব হয় সেখানে কিন্তু সবাই নিজের কাজ নিজেই করে। নিজের গাড়ি নিজে ড্রাইভ করে, বাজার নিজে করে, বাগান পরিষ্কার করে, স্কুল বাস না থাকলে বাচ্চাকে নিজে স্কুলে নিয়ে যায় - বলা চলে তার একার পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব সে তাই করে। আমি কোন ভাবেই মনে করিনা আমরা বাঙ্গালীরা তাদের থেকে খুব একটা ভালো জীবন-যাপন করি। 

এদের মধ্যে যারা বেশি সচেতন তারা আরো দুটো জিনিস করে, নিয়মিত শরীরচর্চা করে আর প্রচুর বই পড়ে। দিনশেষে এই দুটো জিনিসই আপনার নিজের কাছে থাকে

আমার মন খারাপের বিকেলে সন্ধ্যা নামে বাগানবিলাসের নিচে

খুব বেশি মন খারাপ হলে কি করি? 

মন ভালো করার অহেতুক চেষ্টা আমি করি না। আমার মন খারাপের কারন অন্যেরা না যতটা তার থেকে বেশি আমি নিজে। কারন অন্যদের কথায় আমি গুরুত্ব দেই। অন্যরা বলতে খুব কাছের মানুষেরা। তারা যা বলে সেটাই বিশ্বাস করতে চাই। এরপর যখন নিজে ভুক্তভুগি হই তখন মন খারাপ হয়।

না বলাটা আমার পছন্দ ছিল না এককালে। খুব কষ্ট করে সেটা আয়ত্ব করেছি। নিজের যা ভাল লাগে না, সেটাতেই এখন হুট করে না বলে দেই। এর পরেও কেউ খুব ঝোলাঝুলি করে। তখন আমি চুপ করে থাকি। অহেতুক কথা বলাটা আমার পছন্দ নয়। একসময় তারা রণে ভংগ দেয়। আমার নিরবতা জিতে যায়। আমার স্বভাবের কিছুটা বোধহয় আমার মেয়েটা পাচ্ছে।

মন খারাপ হলে আমি গান শুনি, বাংলা মেলোডিয়াস গান। কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে যাওয়া যায় সুরের ভুবনে। খুব অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে আমি স্লো মিউজিকের গান বাদে ইদানিং আর কিছু পছন্দ করি না। এটা মনে হয় বয়সের স্বভাবে হয়েছে। এত এত সুন্দর বাংলা গান আমাদের আছে ভাবতেই ভাল লাগে।

মানুষের সংগ এড়াতে, নিজেকে বাসায় বন্দি রাখতে আমার সমস্যা হয় না। কারন পৃথিবীর বিখ্যাত যে কোন বই আমার হাতের নাগালে থাকে আর অগুনিত সায়েন্স ফিকশন মুভি। প্রযুক্তি আমাকে এই নিঃসঙ্গ থাকার অধিকার দিয়েছে। মাঝে মধ্যে বাইক নিয়ে ঢাকার রাস্তায় অহেতুক ঘুরতেও ভাল লাগে। রাস্তায় নামলে বোঝা যায় মানুষের অনেক তাড়া, রাগ-ক্ষোভ। দেখতে ভালো লাগে।

একসময় অনেক আড্ডা দিয়েছি। রাত-দিন আড্ডার পেছনে বুঁদ থাকতাম। এখন মনের মত সঙ্গী না পাওয়ায় আর আড্ডা দিতে ভালো লাগে না। আমি সাহিত্য আর বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতে চাই ঘন্টার পর ঘন্টা। সেরকম কাউকে খুঁজে পাই না। পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেল অবধারিত ভাবে চলে আসে রাজনৈতিক আলাপ। কাঁহাতক আর একই একই বস্তা পঁচা আলাপ করা যায়?

ইদের সময় তাই এবার বাসা থেকে বের হইনি। খুব আনন্দের একটা সময় কেটেছে একাকি। ঢাকায় ছুটির দিনে বের হলেই মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যেতে হয়। জীবন উপভোগ না করতে পারা মানুষেরা রাস্তায় অহেতুক ভীড় করে। এই শহরে যেহেতু আনন্দ কেন্দ্রের অভাব, তাই যত সামান্য রাস্তায়, ব্রিজে আর শপিং মল গুলোতে তাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। 

একটা শহরের মানুষের প্রধান আনন্দ উদযাপনের প্রক্রিয়া হচ্ছে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া। কি অদ্ভুত অস্বাস্থ্যকর একটা নিয়ম বানিয়ে ফেলেছি আমরা। রেস্টুরেন্টের খাবার এমনিতেই আমার খুব অপছন্দের একটা বিষয়। জীবন বাঁচানোর জন্য যে ভাত-ডাল আর আলুভর্তা রান্না করতে হয় সেটা আমি নিজেই পারি। তবুও মাঝে মধ্যে রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে হয় সময় বাঁচানোর জন্য। সেটা অবশ্যই শখ করে নয়। আমি হোম ডেলিভারি নেই। বাসায় বসে খাই। খেতে খেতে বিজ্ঞান বিষয়ক কোন একটা টকশো দেখি ইউটিউবে।

বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে নিজেকে যতই উন্নত করছি ততই একা থাকতে ভালো লাগছে। অহেতুক আলোচনা বিরক্তিকর মনে হয়, আর কাউকে ভূল সিদ্বান্ত নিতে দেখলে মন খারাপ হয়। 

আমি একসময় অনেক উপদেশ বিলি করতাম। সেটা অবশ্য খুব কাছের মানুষদের। এখন সেটাও করি না। ভূল না করলে কেউ শেখে না। কিছু কিছু ভূল আবার এত মারাত্বক যে তারা পয়েন্ট অব নো রিটার্ন পার হয়ে যায়। সাবধান করার পরেও যারা বোঝেনা, তাদের জন্য মায়া দেখাতে গিয়েও মন খারাপ হয়।

কিছু জিনিস শেখা সবার খুব দরকারঃ

- শিক্ষা কাউকে দেয়া যায় না, যদি না তার শেখার মানসিকতা থাকে। তাই অহেতুক উপদেশ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নিজের থেকে কম বুদ্ধিমান কারো সাথে তর্ক করতে যাওয়া যাবে না। এরা আপনার সময় আর মানসিক শান্তি নষ্ট করবে।
- ধর্ম আর রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস যত কমাবেন নিজেকে তত স্বাধীন মনে হবে। দুইটাই আপনার চিন্তার প্রসারকে পরাধীন করে দেয়। ভুল সিদ্বান্ত নিতে উৎসাহী করে।
- টাকার থেকে বড় বন্ধু আপনার কেউ নাই। যারা আজকে আপনাকে মূল্যায়ন করছে বা সেলাম ঠুকছে তারা এই টাকার ক্ষমতার কারনেই দিচ্ছে।

এই লেখাটা যখন লিখছিলাম তখন বেশ মন খারাপ ছিল। লিখতে লিখতে সেটা ভালো হয়ে গেছে। মন খারাপ হলে তাই আমি লিখিতে বসি। মন ভাল থাকলেও লিখি। তবে লেখালেখি মন ভাল করে দেয়ার একটা অন্যতম উপায় আমার কাছে।

 

ধর্ষন মানসিকতা এবং বাঙালীর দৃষ্টিভঙ্গি

বাইক সার্ভিসিং করতে গিয়েছিলাম। সাধারনত আমি মেকানিককে সমস্যার কথা বলে ওয়েটিং প্লেস এ গিয়ে বসে থাকি। আমার থেকে সে তার কাজ ভালো বোঝে, তাকে বুদ্ধি দেবার কোন দরকার নেই। আজকে অস্থির লাগছিলো দেখে সার্ভিসিং এর জায়গায় গিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলাম। দেখছিলাম কিভাবে কি করে! আরো কিছু লোকজন এসেছে তাদের বাইক সার্ভিস করতে। এর মধ্যে একজন আবার আমার জন্য নির্ধারিত মেকানিকের সাথে এসে গল্প জুড়ে দিলো। গল্পের মূল বিষয় টক অব দ্যা কান্ট্রি আছিয়া ধর্ষন এবং আসামীদের পরিণতি কি হওয়া উচিৎ। কথায় কথায় সে বলল এই রাষ্ট্র কোন কাজের না, এখন জামায়াতের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেয়া উচিৎ। আফগানিস্তানের মত শরীয়া আইন করা হলে এইরকম গর্হিত কাজ ঘটত না। আমি মনোযোগ দিতে না চাইলেও অনেকক্ষন শুনলাম। কিছু বললাম না।

আমি লোকজনের সাথে কথা বলতে পছন্দ করি না। আমার কথা বেশিরভাগের পছন্দ হয় না। কারন সবাই যখন ঘটনা এক দৃষ্টিকোন থেকে দেখে আমি ঘটনা দশদিক থেকে দেখতে পছন্দ করি। এই ছেলে জামায়াতের বা শিবিরের হতে পারে। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। জেনজির বৃহৎ একটা অংশ জামায়াত প্রেমী।

সে বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাঁকাল তার কথার ভ্যালিডেশনের আশায়। বারংবার, সে ধর্ষনের জন্য সাথে সাথে মৃত্যুদন্ড এবং জামায়াতের হাতে ক্ষমতা দেয়ার কথা বলছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম শরীয়া আইন নিয়ে সে কিছু জানে নাকি? শরীয়া আইনে একজন মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে এটা প্রমান করতে হলে কি সাক্ষ্য লাগবে সেটা কি সে জানে? আর শরীয়া আইনে শাস্তি কে পাবে সেটা সম্পর্কে তার ধারনা আছে নাকি?

ব্যক্তিটি অপারগতা জানাল। সে শরীয়া আইন সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। এরপর জিজ্ঞেস করলাম, আফগানিস্থানের বর্তমান অবস্থা, তাদের ব্যাংকিং, আমদানি রপ্তানি, চিকিৎসা, খাদ্যের মজুদ ইত্যাদি নিয়ে তার কোন আইডিয়া আছে কিনা? এই যুবক সেটাও খুব ভালো জানে না।

সে অনেক কিছুই জানে না, কিন্তু সে একটা মতামত প্রচার করছে এই দেশে অন্যদেশের মত আইন হলে ভালো হবে। এদের আমি খুব সাধারণ মানুষ হিসেবে ধরি। এটা আমাদের দেশের আর দশটা সাধারণ মানুষের মতামত। আমি ফেইসবুক খুললেই হরহামেশা এই ধরনের সাধারণ লোকজন দেখি। যে কোন ইস্যুতে এরা খুব দ্রুত মতামত দিয়ে দেয়। কারন চিন্তাভাবনা করাটা খুব কষ্টের একটা কাজ। এরা যে কারো কমেন্টের নিচে গিয়ে গালাগালি দিয়ে আসে। অপরিচিত লোকের সাথে বেহুদা তর্কে জড়ায়। সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি এহেনও বিষয় নাই যেটা তারা জানে না।

ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বা মৃত্যুদন্ড বড়সড় একটা জাজমেন্ট। এর ভাল খারাপ উভয় দিকই আছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে আমরা যারা বড় হয়েছি। প্রতিনিয়ত দেখেছি অপরাধীদের বুক ফুলিয়ে আদালত প্রাঙ্গন ত্যাগের দৃশ্য, তাদের কাছে মনে হতে পারে প্রকাশ্যে মৃত্যদন্ড দিলেই বাংলাদেশে খুন, ধর্ষন, কালোবাজারি, প্রশ্নফাঁস, খাদ্যে ভেজাল সব কিছুর সমাধান চলে আসবে। এই ধারনাকে কগনিটিভ ডিস্টরশন (cognitive distortions) বলে।

cognitive distortions এ মানুষের চিন্তা-ভাবনা তার অতীতের অভিজ্ঞতা, পারিবারিক শিক্ষা, ধর্মীয় বোধ, নেতিবাচক চিন্তা ইত্যাদি দিয়ে প্রভাবিত থাকে। এই সমস্যায় ভোগা মানুষেরা সঠিক সিদ্বান্ত নিতে পারে না। এমনকি যে কোন ঘটনার বিচারক হিসেবেও এরা খুব আপত্তিকর সিদ্বান্ত দেয়।

ধর্ষনের যে সাইকোলজিকাল কারন আছে তার মধ্যে এই cognitive distortions একটি। একজন ধর্ষক বা সম্ভাব্য ধর্ষকও এই cognitive distortions এ ভোগে। সে মনে করে নারীর উপর বল প্রয়োগ করা তার সহজাত অধিকার, নারীটি খারাপ প্রকৃতির, তার থেকে দূর্বল, সে পাপী, অবলা ইত্যাদি। 

পৃথিবীর আর কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের কোথাও ধর্ষন হয় না এই ধারনাটাও ভুল। সৌদিতে বাংলাদেশ থেকে যে সকল গৃহকর্মী যায়, তাদের বেশিরভাগের সাথে কি ঘটে আমরা সেটা জানি। আপনি শুধু গুগল করুন। আমি সেই পরিসংখ্যান দিয়ে এই আলোচনা দীর্ঘায়িত করতে চাই না। সেখানে কিন্তু শরীয়া আইন আছে। তারপরেও অপরাধ সংঘটিত হয়।

পরিসংখ্যানের কিন্তু মজার একটা দিক আছে। কোন অপরাধ সংঘটিত হবার পর যদি তা রিপোর্ট করা না হয়, তবে তা পরিসংখ্যানের আওতাভুক্ত হয় না। কোন দেশে ধর্ষনের পরিসংখ্যান কম, এর মানে কিন্তু সেখানে ধর্ষন হয় না এমনটা না। বরঞ্চ আপনি ধরে নিতে পারেন সেখানে ধর্ষন প্রমান করা কঠিন বা অপরাধের লিপিবদ্ধতা নেই।

ধর্ষিত না হয়েও ধর্ষনের মামলা করার নজীর আমাদের দেশে অনেক আছে। তাই হুট করে যদি আমি বলে ফেলি ধর্ষনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে এবং তা ৯০ দিনের মধ্যেই কার্যকর করতে হবে তবে আমি cognitive distortions এর মধ্যে পড়ে যাবো। তদন্ত ৯০ দিনের মধ্যে করতে হবে এই দাবি যৌক্তিক। এর থেকে আগে করা গেলে আরো ভালো। কিন্তু ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট এর জন্য এটাকে জায়েজ করা হলে, যদি একজন নিরপরাধও ভুলক্রমে মৃত্যুদণ্ড পায় এবং তা কার্যকর হয়, তবে এর থেকে বড় ব্যর্থতা আইনের জন্য আর নাই।

এবার আছিয়ার কথায় ফেরত আসি। তাকে ধর্ষন করা হয়েছে এটা একটা অপরাধ, সে একজন মাইনর (শিশু) ছিল, এটা দ্বিতীয় আরেকটা অপরাধ। এরপর সে হাসপাতালে মারা যায়, তিন নম্বর অপরাধ মানে তাকে খুন করা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্র চাইলেই এই তিন মামলার একটিতে অপরাধীকে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দিতে পারে। কোনটির জন্য দেবে সেটা কি বুঝতে পারছেন?

রেইপ কি আমেরিকায় হয়? সেখানেতো আইন অনেক কড়া। তাহলে?

হ্যাঁ, সেখানেও রেইপ হয়। জনসংখ্যার পরিমান আর রিপোর্টেড কেইস হিস্ট্রির পরিসংখ্যানে হয়ত আমাদের থেকেও বেশি। কারন অপরাধ হলে তারা রিপোর্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে একটা অদ্ভুত বিষয় আছে, তাদের আইনে পটেনশিয়াল রেইপিস্ট এবং চাইল্ড এবিউজারদের শাস্তির ব্যবস্থা আছে। মাঝেমধ্যেই তাদের Child Protection Services (CPS) সাঁড়াশি অভিযান চালায় এই সকল কালপ্রিটদের ঘটনা ঘটার আগেই ধরার জন্য।

আমি যতদূর জানি, আমেরিকান জেলে চাইল্ড এবিউজরাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোখে দেখে বাকি অপরাধীরা। এবং সুযোগ পেলেই তাদের সাথে ওই কাজটা করে, যেটা তারা একটা বাচ্চার সাথে করেছে বা করতে চেয়েছে। 

আমার লেখার প্রথমদিকে উল্যেখিত ব্যাক্তিকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি কি রাস্তায় কাউকে একা পেলে ধর্ষন করবেন? সে মাথা নেড়ে না বলেছিল। সে এই শিক্ষা পায়নি এবং এটা অনৈতিক সে দাবি করেছিল। আমি তখন তাকে বললাম, তাহলে একবার চিন্তা করুন আপনি কেন এই খারাপ কাজ করবেন না, আর ওই রেপিস্ট কেন করছে? সমস্যাটা খুঁজে বের করুন। নয়ত শরীয়া আইন, বা মৃত্যুদণ্ড কোনটাই কাজে আসবে না।

আমাদের বাংলাদেশী পুরুষেরা যে মানসিকতায় বড় হয়, তাদের বড় একটা অংশই পটেনশিয়াল রেইপিস্ট। নয়ত কোনভাবেই তারা ধর্ষনের মত একটা খারাপ কাজকে জায়েজ করতে পারে না। আপনি নিশ্চই শুনেছেন ধর্মবেত্তারা বলে বেড়ায় মাহরাম ছাড়া নারী বাইরে গিয়েছে কেন? মেয়েটা হয়ত ঠিকমত পর্দা করেনি, তার চলাচল খুব শ্লীল ছিল না, ইত্যাদি।

মোরাল পুলিশিং এর দোহাই দিয়ে এরা অপরিচিত নারীকে মাথায় কাপড় দিতে বলে, ওড়না বুকের উপর টেনে দিতে বলে, রাতে একা বের হয়েছে কেন এ ধরনের উদ্ভট প্রশ্ন করে। এদের সবাই পটেনশিয়াল রেপিস্ট। আপনি কোনভাবেই আরেকজনের ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। 

ব্যক্তি স্বাধীনতার সীমা কতটুকু? যতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করলে রাষ্ট্রীয় কোন আইন (পেনাল কোড) লঙ্গিত হবে না, ঠিক ততটুক। এর কোন সীমা নেই। যতক্ষন পর্যন্ত না একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রের কোন আইন ভংগ করে ততক্ষণ পর্যন্ত তার পোষাক, চলাফেরা, খাবার গ্রহন, মনোরঞ্জন, কথা বলা বা লিখা ইত্যাদি বিষয়ে বাধা দেয়া যাবে না। একটা মেয়ে যদি ওড়না বাদে হেঁটে যায় আপনার কোন অধিকার নেই তাকে ওড়না পরার শিক্ষা দেবার। তেমনি কেউ যদি হিজাব পরে হাঁটে, আপনার কোন অধিকার নেই তাকে হিজাব খুলতে বলার। কোন ভাবেই আপনি অন্যকারো ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, এটা দন্ডনীয় অপরাধ।

এরপর আমি আড্ডা দিতে গেলাম কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সাথে। এদের কয়েকজন সরকারি চাকুরি করেন। এদের একজন হুট করে বলে বসলেন, আছিয়াকে অনেক সম্মান দিয়েছে রাষ্ট্র। আমি জানতে চাইলাম, কিভাবে? তিনি বললেন, এই যে তাকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হল। আমি প্রচন্ড বিতৃষ্ণায় বললাম, এইরকম সম্মান এই মেয়েটার কোন দরকার ছিলো না। যে পদ্ধতিতে মেয়েটা মারা গেছে সেটা খুব বেদনাদায়ক। আপনার কাছে কেন মনে হল তাকে খুব সম্মান দেয়া হয়েছে?

আমি এই লোকের চেহারা আর কোনদিন দেখতে চাই না। তার চিন্তা-ভাবনা খুব স্থুল। তিনি যদি ধর্ষকের বিরুদ্ধে কিছু গালি দিতেন বা মৃত্যুদণ্ড দাবি করতেন তাও কিছুটা সম্মান আমি তার জন্য জমা রাখতে পারতাম। এই ভদ্রলোককে আমি পরবর্তী প্রশ্ন করেছিলাম যদি রাস্তা দিয়ে একটা সুন্দর মেয়ে হেঁটে যায়, দেখতে খুব স্মার্ট এবং টাইট জিন্স বা টি-শার্ট পরা থাকে, তবে আপনার কি সাহস হবে তার সাথে গিয়ে কথা বলার বা বন্ধুত্ব করার? তিনি জানালেন "না।" এরকম মেয়ের সাথে কথা বলার সাহস তার হবে না। 

বললাম, যার সাথে কথা বলার সাহস হবে না, তাকে রেইপ করার বা জোর করার সাহসও আপনার হবে না। তার মানে যে সকল মেয়েরা ড্যাম কেয়ার ভাবে চলাফেরা করে এই সকল পটেনশিয়াল রেপিস্টরা তাদের শিকার করতে যায় না। তারা সবসময় খুঁজে বেড়ায় দূর্বল এবং অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল মেয়েদের। কারন আমাদের দেশে আইনের অধিকার পাবার জন্য আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে। এবং এই সকল রেপিস্টরা জানে আইন তারা কিনতে পারবে কোন না কোন ভাবে।

আমরা জানি সমস্যাটা কোথায়। কিন্তু শুধু মলম লাগিয়ে তার সমাধান চাইছি। সমস্যা বাঙ্গালীর মানসিকতায়। যে মাইন্ডসেট নিয়ে বাঙ্গালী পরিবারে একটা ছেলে বেড়ে ওঠে, সে মেয়েদেরকে শুধুই সম্ভোগের পন্য, কিংবা ঘরে বন্দি আত্মা হিসেবে দেখে, সে রাস্তায় তার থেকে স্মার্ট সুদর্শনা কাউকে দেখলে আপত্তি তুলবেই। কখনো ভীড়ের মাঝে তার গায়ে হাত দেবে, বাসে জায়গা থাকলেও গা ঘেঁষে বসার চেষ্টা করবে। অফিসে কলিগ হলে বাজে মন্তব্য ছুড়ে দেবে। কারন এইগুলো তাকে ছোট থেকে শেখানো হয়েছে।

বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আমাদের সংস্কৃতির অংশ হতে পারেনি। যদি হত তবে আমরা মোর‍্যাল পুলিশিং দেখতে পেতাম না। মেয়েদের কখনো তেতুলের মত, ঢাকনা না দেয়া দুধের মত ইত্যকার নানা বিশেষনে বিশেষায়িত করা হতনা। 

ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হবার পর তাকে বলা, তুমি টাকা পকেটে নিয়ে একা একা বের হয়েছো কেন, তোমার সাথে গার্ড নেই কেন? ছিনতাইকারীতো ছিনতাই করবেই...। এরা অপরাধকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে ভিক্টিম ব্লেইমিং করে।

পোষাকের স্বাধীনতার কথায় একটা কথা মনে পড়ে গেল, আমাদের স্কুলে কিন্তু বাচ্চাদের পোষাকের স্বাধীনতা নেই। সেখানে তাকে নির্দিষ্ট একটা ড্রেস পরে যেতে হয়। আর্মিতে নেই, পুলিশে নেই - সেখানেও তাদের জন্য নির্দিষ্ট একটা ইউনিফর্ম ঠিক করা থাকে।

ধর্মেও কিন্তু এই স্বাধীনতা নেই। সেখানেও কিন্তু একটা নির্দিষ্ট ধরনের পোষাক পরিধান না করলে আপনাকে হেনস্থা হতে হবে। আপনাকে আগে থেকেই বলে দেয়া হয়েছে এই ধরনের পোষাক না পরলে আপনি খারাপ। শাস্তির পরিমান লঘু বা গুরু হতে পারে। নির্ভর করে আপনি অর্থনৈতিকভাবে কতটা স্বচ্ছল তার উপর।

---

শিশুরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই এবিউজের শিকার হয় তাদের পরিচিত পরিজন দ্বারা। প্রথমত, শিশুরা দূর্বল, এরা প্রতিবাদ করার ক্ষমতা রাখে না, এবং দ্বিতীয়ত, তারা মনে করে সম্মানের ভয়ে শিশুর পরিবার অভিযোগ দায়ের করবে না। চাইল্ড এবিউজের তালিকায় কিন্তু ছেলে শিশুরাও আছে। আমি খুব করে আমার পরিচিত সবাইকে বলে দেই, নিজের বাচ্চাকে যেন চাচা, ফুপু, খালা-খালু, কাজিন এদের সাথে একা একা ছেড়ে না দেন। বিশেষ করে বৃহৎ ফ্যামিলিতে মায়েদের এই দিকে নজর দিতে হবে। কোন একটা লেখায় আমি পড়েছিলাম ছেলে শিশুরা তাদের প্রথম যৌনতা শেখে পরিবারের খালা, ফুপু এদের কাছ থেকে। তখন এই কথাটার মানে আমি হুট করে ধরতে পারিনি। এখন কিছুটা বুঝি।

আপনার বাচ্চাকে কারো কোলে বসতে দেবেন না, চুমু খেতে দেবেন না - এই অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকেই করবেন। 

একদিনে আমাদের সমাজ বদলে যাবে কিছু আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে একথা আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক, আমাদের ধর্মও তাই। এখানে আইন যারা বানিয়েছেন, ধর্ম প্রচারক যারা আছেন সবাই পুরুষ। নারীদের জন্য নারীরা আইন বানায়নি। নারীরা কিভাবে চলবে, কি পরবে, কি খাবে সেই স্বাধীনতা তাদের দেয়া হয়নি। পুরুষেরা যেভাবে নারীদের দেখতে চেয়েছে, রাখতে চেয়েছে, আইন এবং ধর্ম সেভাবেই সাজানো হয়েছে।

 ----

নোটঃ আমাকে নারীবাদী ভাবার কারন নেই। আমার অন্যান্য লেখা পড়লে আপনি হয়ত জানতেন আমি নারী-পুরুষের সমতায় বিশ্বাস করি না। পৃথিবীতে এরা একে অপরের প্রতিযোগী নয় বরঞ্চ সহযোগী। যে কাজ পুরুষ করতে পারবে তা নারীও করতে পারবে এটা আমি যৌক্তিকভাবে বিশ্বাস করি না। সমাজে দুই দলের কাজ ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু কেউ কারো দাস নয়। Equality এর চেয়ে সমাজে Equity এর বেশি প্রয়োজন।

Leave the table if respect is no longer served

সম্মান খুব ঠুনকো একটা জিনিস। কারন এটা ব্যক্তির নিজের উপর নির্ভর করে না। করে তার আশেপাশের মানুষের উপর, তার বসবাসকৃত সমাজের উপর। একজন লেখক যদি অশিক্ষিত একটা সমাজে বসবাস করেন, তবে তিনি খুব বেশি সম্মান পাবেন না। একজন বিজ্ঞানী যদি বাংলাদেশে বসে তার কাজ করেন তবে তিনি আশানুরুপ পুরষ্কৃত হবেন না। মেধাকে মূল্যায়ন করার মত মানসিকতা যদি আপনার আশেপাশের মানুষের না থাকে, তবে আপনার সৃষ্টিশীল কাজের জন্য কোন ধরনের সম্মান পাবেন না। 

এই কারনেই মেধাবীরা দেশে থাকতে চায় না। মেধাকে লালন-পালন করতে হয়, আদর যত্ন দিত্তে হয়, যেটা আমাদের সংস্কৃতিতে নাই। একটা সময় ছিল যখন রাজারা নিজেদের সভায় কবি-সাহিত্যিক, চিত্রকর, শিল্পী এদের বেতন দিয়ে লালন পালন করতেন। তাদের কাজ ছিল শুধু নিজের সময় আর মেধা ব্যয় করে নতুন সৃষ্টিশীল কাজ উপহার দেয়া। এই সকল মেধাবীদের লালন-পালন, নিরাপত্তা আর বাসস্থানের ব্যবস্থা রাজার তরফ থেকে করা হত। কেউ অসাধারন কোন কিছু নিয়ে রাজদরবারে এলে মিলত বিশাল অংকের পুরস্কার আর সম্মান। অসাধারন সব শিল্পকর্ম, সংগীত আর স্থাপত্য কর্মের সৃষ্টি হয়েছিল সেসময়।

সময় বদলেছে, শাসন ব্যবস্থার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান রাষ্ট্র মেধাবীদের লালন-পালন করে না। এখনকার বিজ্ঞানীরা, শিল্পীরা, স্থাপত্য কলাবিদরা কর্পোরেট বেনিয়াদের বেতনভুক। ফলে পুঁজিবাদী সমাজে সকল আবিষ্কারের পেটেন্ট করা হয়। ব্যবসায়িক ফায়দা লোটা হয়। মাঝেমধ্যে রাষ্ট্রের কোন দরকারে কিছুদিনের জন্য এদের ভাড়া করা হয়। এরা কাজ শেষে আবার নিজের প্রতিষ্ঠানে ফেরত যান। 

এই দেশের বেশিরভাগ কবি-সাহিত্যিক এবং শিক্ষকরা রাজনৈতিক দলের দাস। পদ-পদবি, পুরস্কার আর উচ্চতর বেতনের লোভে নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পদলেহনে ব্যস্ত থাকেন। ক্ষমতা কে খুশি রাখাতেই তাদের তুষ্টি। তারা তাদের মগজ বিক্রি করে দিয়েছেন জনপ্রিয় হবার ধান্দায়। আবার কিছু আছেন যারা মার খাবার ভয়ে চুপ করে থাকেন এবং রাষ্ট্রের সকল অনৈতিক কাজেরও বৈধতা দিয়ে থাকেন। এদের দিয়ে পৃথিবী বদলে দেয়া কোন দর্শন অথবা আবিষ্কার সম্ভব নয়।

এইরকম বুদ্ধিজীবী বা শিক্ষকদের যারা ছাত্র তারাও এই ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে যায় ছাত্রাবস্থায়। এরা জানে বর্তমানের বাংলাদেশে সম্মান পাওয়ার দুটো সহজ উপায় আছে- একটা হচ্ছে পয়সা বানালে, আরেকটা হচ্ছে সরকারি বড় চাকুরি করলে। কারন এইসব পদে গেলে ক্ষমতা এবং টাকা দুটোই পাওয়া যাবে। আর এই দুটোই আমাদের বর্তমান সমাজে সম্মানের মাপকাঠি। পড়াশোনা শেষ করে তাই সবার একমাত্র লক্ষ্য থাকে বড় সরকারি চাকরি অথবা বিসিএস ক্যাডার হওয়া।

আমাদের সমাজে একটা কথা খুব প্রচলিত- "নিজের সম্মান, নিজের কাছে।" মানে আপনাকে আপনার সম্মান রক্ষা করতে হবে। অন্য কেউ সেটা রক্ষার চেষ্টা করবে না। বরঞ্চ তারা সবসময় চেষ্টায় থাকবে কিভাবে আপনাকে ছোট দেখানো যায়। যাদের মেধা বা স্কিল নেই, তারা মেধাবীকে ছোট করে নিজেরা বড় হতে চায়। যেহেতু একটা দেশের বেশিরভাগ জনগণ অজ্ঞানতার চর্চা করে, জ্ঞানের দিক থেকে পিছিয়ে আছে। তাদের মূল কাজ থাকে বুদ্ধিজীবী সমাজের কাউকে দেখলেই তাকে ছোট করে দেখা। শোরগোল করে তার কণ্ঠরোধ করা। তাতে যদি নিজেকে কিছুটা জ্ঞানী বলে জাহির করা যায়।

এই কারনে মেধাবীরা যখন দেশ ছেড়ে চলে যায়, আমি দোষের কিছু দেখি না। যৌক্তিক হচ্ছে যখন বুঝবে একটা জায়গায় তোমার কাজের বা মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না, তখন যত দ্রুত পারো সেই স্থান ত্যাগ করবে। গোলাপের মূল্য, সৌন্দর্য আর ঘ্রান ফুল প্রেমির কাছে হয়। যাদের নাকে গোলাপের গন্ধ পৌছায় না, যাদের মাথাভর্তি নর্দমার মত চিন্তা-ভাবনা, তারা গোলাপের মূল্য দেবে না।

 

বইমেলা ২০২৫

২০২৫ এর বইমেলায় যাইনি। ঢাকায় ছিলাম অথচ বইমেলায় যেতে ইচ্ছে করেনি এটা আমার কোনদিন হয়নি। স্কুলে থাকতে বন্ধুদের নিয়ে যেতাম, কখনো একাই যেতাম আর পরে নিজের বাচ্চাকে সাথে নিয়ে গিয়েছি। আমি চাইতাম বই পড়ার বয়স না হলেও বাচ্চাটা দেখুক এই দেশে বই নামক জিনিসটার একটা মেলা হয়। মানুষ স্বেচ্ছায় সেখানে আসে- বই নেড়েচেড়ে দেখে, বই কেনে, গান হয়, ছবি আঁকে, আড্ডা হয়। জগতের ভালো জিনিসের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার একটা ইচ্ছা ছিল আমার।

এবার যাইনি দুটো কারনে, মেলাটা বইয়ের মেলা না হয়ে খাবারের মেলা হয়ে গিয়েছে আর সেখানে তৌহিদি জনতার আনাগোনা বেড়েছে। যারা জ্ঞান চর্চায় বাঁধা দেয়, তারা বইমেলায় কেন যায়? কোন লেখক কি লিখবে সেটা ঠিক করে দেয়ার দায়িত্ব কে কাকে দিয়েছে?

আপনি কি বই পড়বেন সেটা জোর করে কেউ আপনার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়ার জন্য আমি যেমন আপনাকে জোর করব না, আপনিও আমাকে জোর করবেন না আপনার অখাদ্য মতবাদ, বানান ভূল সর্বস্ব প্রেমের কবিতা বা রগরগে চটি গল্প পড়ার জন্য। তবুও আপনি লিখুন, প্রকাশ করুন। 

আমি চাই সবাই স্বাধীনভাবে লিখুক। সময় ঠিক করে দেবে কে টিকবে আর কে টিকবে না। আইন করে বই প্রকাশ অথবা বিক্রিতে বাঁধা দেয়া যাবে না। শিক্ষার মানদন্ডে আমরা এমনিতেই তলানির দিকের দেশ। পাঠ্যবইয়ের বাইরে এই সকল মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞান আর শিল্প সাহিত্যের বইয়ের মেলা তাই জাতির জন্য বাতিঘরের মত। সেটাই নিভে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

কোন প্রকাশক বা লেখকের উপর কোন কারনেই হামলা চালানো যাবে না। নৈতিকতার মানদন্ডে এবং রাষ্ট্রীয় আইনে কোনভাবেই এটা মেনে নেয়া যায় না।

বই প্রকাশ করা কি বাক-স্বাধীনতার অংশ নয়? এই রাষ্ট্রে বাক-স্বাধীনতা শুধুমাত্র একটা  কেতাবি কথা হয়ে গেছে। বিশ্ব যখন সামনের দিকে আগাচ্ছে, আমরা দৌড়াচ্ছি উল্টো দিকে।

বইমেলায় খাবারের দোকান দিয়ে ভরিয়ে ফেলাটা আরেকটা অসুস্থতা। এটা কর্পোরেট কালচারের অংশ, টাকা বানানোর ধান্দা। যারা বইমেলায় খাবার খেতে যায়, তারা বই কেনে না, বই পড়ে না। 

আমি কোন লেখকের বই না পড়েই তার সমালোচনা করি না, অথবা কারো লেখা ভালো বলি না। না পড়েই কাউকে বাতিলের দলে ফেলে দেয়ার আমি ঘোরতর বিরোধী। যুক্তির জবাব যুক্তিতে হবে, পেশীতে বা চাপাতিতে নয়।

কারো মতামতের বিরোধিতা করতে হলে লিখুন। তার আগে পড়ুন, জানুন। একটা সমাজের বৃহৎ অংশ যখন অজ্ঞানতার চর্চা করে, তখন সেখানে গণতন্ত্র, নৈতিকতা আর বাক-স্বাধীনতা টেকে না। যত বেশি পড়বেন তত বেশি পরমত সহিষ্ণুতা বাড়বে।

মেলায় যাইনি কিন্তু বই কিনেছি ঘরে বসেই। ফেইসবুক থেকে দূরে আছি এটাও একটা স্বাস্থ্যকর দিক। এ জায়গাটাও অস্বাস্থ্যকর সব জাদুকরী টোটকায় ভরে যাচ্ছে। সারাদিন গুজব আর মারামারির খবর। খুব বেশিক্ষন সহ্য করা যায় না।

বাংলাবাজার বুকস নামক একটা পেইজ থেকে বই অর্ডার করেছিলাম গত বছর। সেটা এই বছর ডেলিভারি দিয়েছে! ঠিক করেছি, আমি কোনদিন বই প্রকাশ করলে সেটা পিডিএফ হিসেবে বিলি করব অতি অবশ্যই। ছাপার অক্ষরের থেকে খরচ ও কম আর দ্রুত পাঠকের কাছে পৌছানো যাবে।

 

 

আধুনিক দাস ব্যবসা

বাংলাদেশে পড়াশোনা শেষ করতে করতে একটা ছেলের বয়স ২৭ পেরিয়ে যাওয়াটা অদ্ভুত নয়। এরপর চাকরি পেতে পেতে আরো এক-দু বছর। বাঙালীর গড় আয়ু হিসেব করলে জীবনের অর্ধেকটা সে ব্যয় করে ফেলে একটা নিরানন্দ মূলক কাজে। যারা পড়াশোনার মূল লক্ষ্য ধরে নিয়েছিল চাকরি পাবার আশায়, তাদের কৈশোর এবং যৌবনের একটা বড় অংশ চলে যায় অন্যের হয়ে দাসত্ব করতে গিয়ে।

আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা আসলে দাস তৈরির কারখানা। নতুন কিছু শেখার আনন্দ থেকে শিশুদের এটা বঞ্ছিত করে। এদিক থেকে হিসেব করতে গেলে যারা ফেল মেরে জীবনের অন্যান্য কাজে বা ব্যবসায় মনোযোগ দেয় তারা বেশ ভাগ্যবান। তবে যারা বড় হয়েছে শুধুমাত্র একটা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করে জীবন পার করে দেবার জন্য, তারা মূলত আধুনিক দাস।

একটা সময় ছিল যখন পৃথিবীতে দাস ব্যবসা অনেক লাভজনক ছিল। জাহাজে করে আফ্রিকা থেকে কালোদের কিংবা যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে আসা হত ইউরোপ, আমেরিকা এবং আরবে। মানুশকে পন্য হিসেবে বিক্রি করে দেয়া তখন সভ্য সমাজের একটা ব্যবসা ছিল। দাসেদের কোন ইচ্ছা ছিল না। বেঁচে থাকার বিনিময়ে তারা খাবার এবং বাসস্থান পেত। বিনিময়ে তাদের যেকোন কাজ করতে হত। রাস্তা বানানো, শহর বানানো, মনোরঞ্জনের জন্য হত্যা, সৈনিক হিসেবে - মোটামুটি সব কাজেই তাদের নিয়োগ করা হত। দাসদের কোন অভিজ্ঞতার দরকার ছিল না। মার খেতে খেতে শিখে যেত কিভাবে কাজ করতে হয়।

যুগ বদলেছে। মানুষ যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। মানবাধিকার নামে একটা কাল্পনিক বিষয়ের অবতারনা হয়েছে। চাইলেই কেউ আর এখন একটা মানুষ কিনে নিতে পারে না। এখনকার পুঁজিবাদি সমাজের কাজ করিয়ে নিতে কিছুটা শিক্ষিত আর ভদ্র দাসের দরকার। এরা যেন সহজে বিদ্রোহ না করে, স্বেচ্ছায় কাজ করে আর সময় মত কর্মস্থলে হাজিরা দেয় - ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত হওয়া দরকার।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাটা  তৈরি হয়েছে সেরকম দাস বানাবার জন্য। এখানে যারা শিখতে আসে তাদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে দেয়া হয় যেনতেন ভাবে একটা চাকরি পাওয়াকে। পড়াশোনা শেষে চাকরি পেলে তাই সে খুশিতে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, মিষ্টি খাওয়ায়।

আধুনিক দাসদের বন্দি করে রাখতে হয় না। তাকে মাস শেষে নির্দিষ্ট পরিমানে টাকা দিলে সে সময়মত পরিপাটি হয়ে, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ঠিক ঠিক চলে আসে নির্দিষ্ট জায়গায়। তাকে যাই বলেন সে মাথা পেতে নেয় ইয়েস বস বলে। সহজে বিদ্রোহ করেনা, কারন তাতে কাজ চলে যাবার ভয়। কাজ চলে গেলে বাসা ভাড়া, বাচ্চার স্কুলের বেতন, বাসার রেশন, ইলেক্ট্রিসিটি বিল এসব সে দিতে পারবে না। সভ্য সমাজে সে আর থাকতে পারবে না।

কি অদ্ভুত একটা প্রক্রিয়া না? শুধু সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, শেকলে বাঁধা দাসের শেকল এখন আর দেখা যায় না। কিন্তু দিনের আলো সে বিক্রি করে দেয় আরেকজনের কাছে। তার পারিবারিক জীবন বলতে ঐ ছুটির দু'দিন।

যারা গবেষণা করার জন্য পড়াশোনা করে, কবি বা সাহিত্যিক হয়, বড় চিত্রকর হয়, সঙ্গীত কে ভালোবেসে জীবন কাটিয়ে দেয় এরা সমাজের খুব ছোট একটা অংশ। এরা আমার হিসেবের বাইরে।

সেদিন এক বন্ধুর সাথে কথায় কথায় বই পড়া নিয়ে কিঞ্চিত ঝগড়া হয়ে গেল। তাকে বলেছিলাম নিজের ধর্মগ্রন্থ বাদে কিছু বিজ্ঞানের বই, দর্শনের বই পড়তে। সে সাফ জানিয়ে দিল, এসব বই পড়ে বিজ্ঞানমনস্ক লোকজন যারা সাধারনত নাস্তিক হয়। তার এত বই পড়ার কোন ইচ্ছা নেই।

বই পড়ে মানুষ জ্ঞান অর্জনের জন্য, নিজের চিন্তাকে পরিশীলিত করার জন্য, দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবার জন্য। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটাই এমন সেটা বাচ্চাদের ছোট থেকেই বই পড়ার প্রতি অনীহা তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এরা এমনকি নিজের ধর্মের ব্যপারেও খুব কম জানে। এদের ধর্মীয় জ্ঞানের বেশিরভাগই আসে অন্যের করা ওয়াজ থেকে। 

যে বাচ্চাটা ঘাসের রঙ সবুজ কেন? আকাশে বিজলি কেন চমকায়? সূর্য কি আসলে জ্বলছে? - এরকম প্রশ্ন করত একসময়, স্কুল থেকে বের হয়ে সে বুঝে যায় জীবনে বড় হতে হলে বিসিএস পরীক্ষা দিতে হবে। 

দাসেদের কারখানা একবার চালু হয়েছে, এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন দাস উৎপাদন করেই যাচ্ছে।

আমাদের মতন রাষ্ট্রের আসলে বুদ্ধিমান মানুষের দরকার নেই। তার দরকার সু-নাগরিক তৈরির একটা কারখানা। যেখান থেকে বছর বছর ট্যাক্স দিতে পারবে, আইন মেনে চলবে আর "যা বলব তাই শুনবে" এমন লোকজন বের হয়। তাই একটা তথৈবচ শিক্ষা ব্যবস্থায় ঢেকে দেয়া হয়েছে সবজায়গা। যারা পালিয়ে বাঁচতে পেরেছে তারাই জীবনটাকে কিছুটা উপভোগ করতে পারছে।

পড়াশোনা করে শিক্ষিত হবার লক্ষ্যটা কি, সেটা বাচ্চাদের নতুন করে শিখিয়ে দেয়া দরকার। জীবনের লক্ষ্য উপভোগ করা, দাস হিসেবে নিজেকে স্বেচ্ছায় বিক্রি করে দেয়া নয়।