জুলাই ২০২৪, প্রচন্ড অস্থির একটা সময়। কেউ কারো কথা শুনছে না, সরকার পেশী শক্তি দেখানোর চেষ্টায় আছে, ছাত্ররাও নিজেদের আদর্শ থেকে সরছে না।
আওয়ামীলীগ সরকার কোনভাবেই বুঝতে চাইলো না, বিশ্বাস বা আদর্শের মৃত্যু হয় না। তাকে বদলাতে হয়। গুলি চলেছে, মানুষের প্রান গিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের জয় হয়েছে।
৫২ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত, বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়ে কোন সরকার টিকে থাকতে পারেনি।
অনেক বিজ্ঞ বিজ্ঞ রাজনৈতিক কলামিস্ট ইতিমধ্যেই বলে ফেলেছেন কেন, কিভাবে, কি হয়েছে। আমার নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষন আছে বর্তমান ছাত্র অভ্যুত্থান নিয়ে।
অভ্যুত্থানের পেছনে আমেরিকা ছিলো, নাকি বিএনপি এবং জামাত-শিবির, সেটা যদি ক্ষমতাসীন দল বলে দেয় তবে জনগন সেটা অবিশ্বাস করবে এটা খুব স্বাভাবিক। খুব সুদূর প্রসারি চিন্তা ভাবনা করাটাও বেশিরভাগ লোকের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বর্তমানটাই দেখে এবং সেই অনুযায়ি হুট করে একটা মতামত দিয়ে দেয়।
এই দেশে কোন কালেই সরকার জনগনের প্রিয় ছিলো না এবং আমাদের দেশে খুব সম্ভবত কখনই নিরপেক্ষ নির্বাচন বলে কিছু হয়নি। ভবিষ্যতে যে হবে না সেটা অবশ্য বলতে পারছি না। পরিবর্তন আসতেই হবে এবং ১০০ ভাগ না হলেও যদি ৮০ ভাগও পরিবর্তন হয় এই জেনারেশনের হাত ধরে, তবে সেটাও খুব চমকপ্রদ হবে।
ক্ষমতার ধর্মই হল সেটা সময়ের সাথে দূর্নীতিগ্রস্থ হবে। রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র সবগুলো এই ধারা মেনে চলে।
স্বাভাবিক ভাবেই তাই এর পরিবর্তন দরকার। যদি সরকার পরিবর্তন না হয় তবে তাদের মাঝখানে একটা উন্নাসিকতা চলে আসে। ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করে। নিজেদের যা ভালো লাগে তা অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। একবারও চিন্তা করেনা আমার পদ্ধতি ভূলও হতে পারে।
গত পনের-বিশ বছরের শাসনামলে আওয়ামীলীগ যে পাপের বোঝা বাড়াচ্ছিল তার মিনার এই আন্দোলনের ধাক্কায় তাই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে। এটা হবারই ছিলো। আমরা সিস্টেম কলাপসের আশা করেছিলাম। কিন্তু সেটা যে এত দ্রুত আর এতগুলো তাজা প্রানের বিনিময়ে হবে সেটা ধারনা করতে পারিনি।
আওয়ামীলীগের ভুল নিয়ে এখন কথা বলা সোজা, কারন তারা আর ক্ষমতায় নাই। এতদিন যারা চোখ-কান বুজে সব নিরবে সমর্থন করেছিলেন বা বাধ্য হয়েছিলেন এরা তাই গর্ত থেকে বের হয়ে আসবেন। এবং বিপ্লব পরবর্তিতে তাদের ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টায় কিছু ধ্বংসযজ্ঞ চালাবেন দেশজুড়ে। এর প্রথম শিকার হবে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর।
বাংলাদেশের কালচার অনুযায়ী কিছু সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িও পোড়ানো হবে।
সরকারি স্থাপনা ভাংচুরও এই প্রক্রিয়ার বাইরে যাবে না। প্রচুর মুরাল এবং স্কাল্পচারও ভাঙ্গা হবে। বিপ্লবের পরে সব দেশেই হয়। পূর্ববর্তী সরকারের করা বেশিরভাগ জিনিসের উপর আক্রোশ দেখায় জনতা। তবে আমাদের এখানে যেটা হচ্ছে সেটাকে ইসলামি রুপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে মূর্তি হারাম বলে। ইসলামে মূর্তি হারাম কারন সেগুলোর পূজা করা হয়। স্কাল্পচার ভাঙ্গার যুক্তি, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্বের স্মৃতি বিজড়িত জিনিস ভাঙ্গার যুক্তি আমি পাইনা।
আমি এমন লোকও চিনি যারা শহীদ মিনার এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
এর মাঝে কিছু সুবিধাবাদি দল থাকে যারা লুটতরাজে অংশ নেবে, ডাকাতির চেষ্টা করবে। থানাগুলোয় একের পর এক আগুন দেয়া হয়েছে। দেশে কার্যত এখন কোন পুলিশিং ব্যবস্থা নেই। আমার বিশ্বাসমতে যারা এই ছাত্র আন্দোলন করেছিল, তারা সবাই রাজনৈতিক ভাবে বেশ স্ব-শিক্ষিত এবং একটা নৈতিকতা ধারন করে। এরা দেশজুড়ে সব থানায় আক্রমন আর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে না। এটা সম্পূর্নভাবে অনৈতিক এবং দেশকে লম্বা সময়ের জন্য অস্থির অবস্থায় ফেলে দেবে।
এই ব্যপারটা পুরোটাই রাজনৈতিক। আওয়ামীলীগ তার শাসনামলে পুলিশ থেকে শুরু করে আর্মি সবজায়গাতেই নিজস্ব দলীয় নিয়োগ দিয়েছিলো। মানুষের এই আক্রোশ সেখান থেকেও আসছে। বিচারবিহীন ভাবে ছাত্রদের উপর গুলি চালানো এটা ছিল ভিমরুলের চাকে ঢিল দেয়ার মতো।
পুলিশকে জনগনের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছে বিগত সরকার। বাংলাদেশ আর্মি এই কাজটা করতে চায়নি। তারা অতীতের এরশাদ আমলের ঘটনা ভুলে যায়নি। সমর্থন না পেয়ে তাই সরে দাঁড়াতে হয়েছে হাসিনা সরকারকে। সরকার পতনের পরে তাই প্রশাসনে চলছে চরম বিশৃংখলা। রদবদল চলছে সবজায়গায়।
আজকে বাংলাদেশ পুলিশের যে দূরবস্থা, তার জন্য পুরোপুরিভাবে দায়ী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। পুলিশকে তারা গত পনের বছর ধরে রাষ্ট্রীয় লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তার আগে বিএনপি এবং এরশাদ সরকারও একই কাজ করেছিল। অথচ কেউ কারো ভূল থেকে শিক্ষা নেয়নি।
এই জনপদে যারাই এসেছে তারা ক্ষমতার মসনদ নিজেদের উত্তরাধিকার ভেবে বসে ছিল। জনগণের সেবক হিসেবে থাকার কথা যে পুলিশের তারা অনেক দূরে সরে গিয়েছিল জনস্রোত থেকে। আমি খুব সাধারণ মানুষ হিসেবেই দেখেছি পুলিশের প্রতি মানুষের প্রচন্ড ঘৃণা এবং অনাস্থা। এটা কাটিয়ে ওঠাটা কঠিন মনে হলেও অসম্ভব নয়। কারন দিন শেষে সবাই নিজের ঘরে আরামে নিদ্রায় যেতে চায়। রাতজেগে বাড়িঘর পাহারা দেয়াটা কিংবা রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন আর ময়লা পরিষ্কার কিছুদিনের জন্য রোমান্টিক হতে পারে, তবে যৌক্তিক নয়।
যার কাজ তাকে করাটাই সাজে। সুশাসনের অংশ হতে গেলে শ্রম বন্টন এবং তদারকি থাকতে হয়। থাকতে হবে আইনের শাসন। তার জন্য আমাদের পুলিশ দরকার।
ছাত্র আন্দোলন সফল হয়েছে, ক্ষোভে বা আবেগে এটাকে মুক্তিযুদ্ধ বলে এখন চালিয়ে দেয়া গেলেও ইতিহাসে এটা যৌক্তিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধ বলে পরিচিতি পাবে না। ছাত্র আন্দোলন আমাদের এই জনপদে নতুন নয়। এই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধ বললে ১৯৭১ কে অবহেলা করা হয়, লাখো শহীদকে তুচ্ছ করা হয়। তবে এটা কাগুজে ভাষা। কারন মৃত শহীদদের তাতে কোন আপত্তি থাকার কথা না। আপনি যা খুশি বলতে পারেন। তারা কবর থেকে উঠে এসে কোন দাবি দাওয়া পেশ করে না, অভাব অনুযোগ করে না। যত সমস্যা সব হয় জীবিতদের। তারা মৃতদের জীবনের বদলে রাজনীতি করে।
স্বৈরশাসক এদেশে বারবার এসেছে এবং প্রত্যেকবার পরাজিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও যে আসবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারন এই জনপদের মানুষ নৈতিক ভাবে এখনও প্রচন্ড অশিক্ষিত।
কিন্তু তাই বলে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, এবং বঙ্গবন্ধুকে অপমান করার কোন যৌক্তিকতা নেই। সেই সময়টা মিথ্যে নয় এবং তাদের ত্যাগ বৃথা যায়নি। একটা নতুন জাতি তার স্বপরিচয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে আবির্ভূত হয়েছিল।
যে কোন সরকার যেন স্বৈরশাসক না হয়ে উঠতে পারে সেজন্য দরকার একটা কার্যত শক্ত বিরোধীদল। আওয়ামীলীগের সব থেকে বড় ভূলের একটা ছিল এটা। দেশে যখন কোন বিরোধীদল থাকে না, তখন জনগনই সরকারের বিরোধী দল হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। আশা করি ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা এদিকটা ভেবে রাখবেন।
আমি ভোটাধিকার প্রাপ্ত হবার পর মাত্র একবার ভোট দিতে পেরেছিলাম। গত তিনবারে দেশে আদতে কোন ভোট হয়নি। ভোট নিয়ে আমি খুব চিন্তিত ছিলাম এমনও নয়। মূর্খের দেশে গণতন্ত্র খুব বেশি কাজও করে না। সেখানে বারবার বিপ্লব আসে আর দেশ পিছিয়ে যেতে থাকে।
গণতন্ত্র তখনি মোটামুটি আকার নিতে থাকবে যখন, প্রথমত রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের গঠনতন্ত্রে গণতন্ত্র থাকবে। বাই রোটেশনে দলের সভাপতি, নেতা, সহনেতা এরকম প্রধান পদগুলোতে পরিবর্তন আসবে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র কাঠামোয় থাকতে হবে কেউ এক বা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি হতে পারবে না। আপনি যখন জানবেন আপনার দলের বা দেশের জন্য আপনি যতই কাজ করেন না কেন কখনো দলীয় বা রাষ্ট্র প্রধানের পদ আপনি পাবেন না, তখন তেলবাজিই হয়ে যাবে সবার প্রধান অস্ত্র। একজন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। তাকে ঘিরেই সবাই নাচে, গায়, আর দূর্নীতি শুরু করে। আমাদের মূল রাজনৈতিক দলগুলোর ভরাডুবি হয় এই কারনেই।
পরিবারতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলাটাও একধরনের কৌতুক। এখানে ভোটাধিকার দিলেও আদতে কোন পরিবর্তন আসেনা নেতৃত্বে। যাহা লাউ তাহাই কদু হিসেবে রয়ে যায় ৫০ বছর পরেও। একটা বৃহৎ পরিবারের মতই রয়ে যায় দেশ। আমাদের পরিবারগুলোতে যেমন কর্তাই সব করেন, তার ইচ্ছাতেই পরিবার চলে। একটা সময় সন্তানেরা বড় হয়ে আলাদা হয়ে যায়, অথবা উপার্জনক্ষম হলেই বাধে মতানৈক্য, গৃহযুদ্ধ এবং অবধারিত ভাবে পিতা পরাজিত হন। ভাগ হয়ে যায় পরিবার এবং নতুন পরিবারের সৃষ্টি হয়।
দেশকে একইরকম হতে দেয়া যাবে না। এখানে সর্বমতের শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতা থাকতে হবে।
একজন স্বৈরশাসক যেহেতু জনগণের ভোটে আসেন না, তাই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তাকে ব্যবসায়ী, আর্মি, পুলিশ, প্রশাসন এবং নানা লোকজনকে খুশি রাখতে হয়। দূর্নীতির শুরুটা হয় সেখান থেকে। নিজে টিকে থাকার জন্য অবধারিতভাবে মেনে নিতে হয় অনেকের অন্যায্য আবদার। কখনোই বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজের গলা উঁচু করে বলতে পারেন না, আমার দেশের মানুষ এটা চায় না। আমি দেশের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সেখানে গিয়েও তাকে মেনে নিতে হয় অন্যায্য দাবি। বাড়ে নিজ জনগনের অসন্তোষ। এটা একটা চক্রের মত। সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে বিরুদ্ধ মতের দমন করতে হয়। যখন থেকে আপনি ভোটে কারচুপি করা শুরু করবেন, জেনে রাখবেন আপনার পতন অনিবার্য।
দেশে সরকার পতনের পরপরই বিএনপির সমাবেশ দেয়াটা একধরনের মূর্খতা ছিল। তারা এই আন্দোলনের ফলভোগ করতে চাইছে, চাইছে জামায়েতে ইসলামির মত পল্টিবাজ দলও। ক্ষমতায় যাবার জন্য এই দুই দল যা করার তা করবে, সেটা যতই অনৈতিক হোক।
যেকোন স্থাপনার নামকরনের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ একটা স্বৈরাচারী এবং দলান্ধের পরিচয় দিয়ে গেছে আগের বিএনপি সরকারের মত। তাই সরকার বদলের পরপরই জামায়াত এবং বিএনপি মিলে এগুলো মুছে ফেলার আপ্রান চেষ্টা করছে। এটাও ক্ষমতা দেখানোর একটা উপায়।
ইসলামী ঘরানার দলগুলো ধর্ম পুঁজি করি আবেগি জনগনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে মূর্তি ভাঙ্গা জায়েজ, রাস্তার নাম ইসলামিক হতে হবে, চত্তরের নাম এরাবিক হতে হবে।
একটা ভিডিওতে দেখলাম তারা এরাবিক গ্রাফিতি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে, আশা জনগন এটা মেনে নেবে ধর্মীয় আবেগে। এরপরই তাদের সাথে বাম এবং সাধারণ ছাত্রদের লেগে যায়। মুছে ফেলা হয় সেই গ্রাফিতি।
খুব সূক্ষভাবে নারীর ক্ষমতায়ন কমবে এবং একটা পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠী তৈরি হবে ধর্মের নামে, যদি এখনি তাদের প্রতিহত না করা যায়।
পৃথিবীর কোথাও ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া দেশগুলো শান্তিতে নাই। আমাদের এই ঝামেলাটা তাই দেশভাগের পর থেকেই শুরু হয়েছে। এবং এটা চলমান থাকবে...।
আপনি ধর্মান্ধতাকে রুখে দিতে পারেন শুধুমাত্র সংস্কৃতি আর নৈতিক শিক্ষা দিয়ে। আমাদের বেশিরভাগ মানুষ এটা বুঝতেই চায় না যে, নৈতিক হবার জন্য ধর্ম অপরিহার্য নয়। অপরিহার্য হচ্ছে যৌক্তিক হওয়া আর শিক্ষা। আমাদের নিজস্ব বাঙ্গালী আচার এবং অনুষ্ঠান আছে এগুলোর উপর কিছুদিন পরে নিষেধাজ্ঞা আসলেও খুব অবাক হবার কিছু নেই। গুজব আর অপপ্রচারে কুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী খুব সহজেই প্রভাবিত হয়।
আমি কখনই চাইনা আরব বসন্তের পরবর্তী অবস্থা হোক এই দেশে। একটু গুগল করলেই দেখতে পাবেন তাদের বর্তমান অবস্থা। আমাদের জেন-জি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং ২০২৪ এর ছাত্র আন্দোলনে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, এরপর চাইনা দেশে আরেকটা সংঘাত বেধে যাক এদের সাথে বিএনপি এবং ধর্ম ব্যবসায়ীদের। গোড়াতেই সমস্যার সমাধান করা গেলে সংঘাত এড়ানো যাবে। আরব বসন্তের পরেই ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্ঠীর যে উত্থান হয়েছে তার খেসারত এই দেশগুলো এখনো দিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের পরিনতি যেন একইরকম না হয়।
ড. মোহাম্মদ ইউনুস একজন যোগ্য ব্যক্তি, অন্তত তার ট্র্যাক রেকর্ড তাই বলে। তিনি মিষ্টভাষী এবং বাক্যে অহেতুক অলংকারের ব্যবহার কম করেন। রাজনীতিবিদদের মত চিৎকার করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করেন না। কাউকে অহেতুক গালাগাল আর দোষ দেন না। এটা খুব আশার বিষয়। তিনি এয়ারপোর্টে নেমেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় আবেগে কেঁদে ফেলেছেন বা চেষ্টা করেছেন। তার পেছনে দাঁড়ানো একজন চোখমুখ খিঁচে খুব চেষ্টা করছিলো কান্না আনার। এসব আমরা দেখে আসছি অনেক কাল থেকেই। রাজনৈতিক কান্না আর আসল কান্নার পার্থক্য বোঝার ঘিলু আমাদের আছে। প্রথমবার করেছেন দেখে তাকে মাফ করা যায়।
আমরা আবেগ বিক্রি করে এরকম কাউকে চাইছি না। চাইছি শান্ত এবং যৌক্তিক একজন নেতাকে।
ক্ষমতার গন্ধ সবসময়ই তীব্র। তার সুবাসে চাটুকারেরা তাকে ঘিরে ফেলবে খুব দ্রুত। এই ভদ্রলোককে যে পরিমান যন্ত্রনা আওয়ামীলীগ দিয়েছে, তা ভুলে যদি তিনি দেশ সংস্কারে মন দেন, সেটাই আমাদের পরম পাওয়া হবে। যেভাবে তিনি ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতা দেখিয়েছেন, আশা করি বাংলাদেশকেও সেরকম ভাবে পথ দেখাতে পারবেন।
বাংলাদেশের সর্বাঙ্গে ব্যাথা, ঔষধ দেবে কোথা? - এর পরেও সংস্কার শুরু করতে হবে। যে দূর্নীতি অতীতের রাজনৈতিক দলগুলোকে অপাংক্তেয় করেছে, নতুন দলগুলো সেখান থেকে শিক্ষা নিক। শান্তি আর সুদিন ফিরে আসুক এই জনপদে।
চেতনার বদলে, ভালোবাসা বিলি হোক। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হোক যুক্তি আর মেধার। এখন সময় আবেগের পরিবর্তে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার।
শেষ করি বৃটিশ
লেখক স্যামুয়েল জনসন এর একটা উক্তি দিয়েঃ “Patriotism is the last refuge
for a scoundrel” মানে হচ্ছে- “শয়তানের শেষ আশ্রয়স্থল হলো দেশপ্রেম।”