পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মানুষ আর বানর

ডারউইন সাহেব একটা সাধারণ পূর্বপুরুষের কথা বলে ধরা খেয়ে গেছেন তাবৎ ঈশ্বরপ্রেমী মানুষের কাছে। বুঝে না বুঝে লোকটাকে হেয় করা হচ্ছে প্রায় দুইশ বছর ধরে।

কিন্তু আচরনগত দিক থেকে আমি খুব সাদৃশ্য পাই, মানুষ  আর বানরের মাঝে। এদেরকে একটু আদর দেখালেই মাথায় উঠে বসে।

মাথা থেকে নামাতে হলে আছাড় দিতে হয়।

 
 

Everything is Literature

 


পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন

Point of no return - এই কথাটা আমি প্রথম পড়ি ব্ল্যাকহোল নিয়ে পড়তে গিয়ে। ব্লাকহোল মহাবিশ্বের এমন একটা স্থান, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এত বেশি যে সেটা টাইম-স্পেসের সাধারণ গাণিতিক সূত্রগুলোকে ভেঙে ফেলে। এই ব্ল্যাকহোল নামক স্থানের আশে পাশে ইভেন্ট হরাইজন নামের যে অঞ্চলটা আছে আমরা সে পর্যন্তই দেখতে পারি। এর পরে বা ব্ল্যাকহোলের ভেতরে দেখতে পারি না। কারন ইভেন্ট হরাইজন এর স্কেইপ ভেলোসিটি (Escape Velocity) আলোর গতির সমান। মানে সেখান থেকে বের হতে হলে কোন বস্তু বা তথ্যের আলোর চেয়ে বেশি গতিতে ভ্রমন করতে হবে। যেহেতু সেটা আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বে সম্ভব নয় তাই, কোন কিছুই এই সীমারেখা অতিক্রম করলে আর ফেরত আসতে পারে না। এই জায়গাটাকে পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন বলে।

আমাদের জীবনেও এই পয়েন্ট অফ নো-রিটার্ন উপস্থিত, কিন্তু আমরা ক'জন সেটা জানি? 

ছোট থেকে বড় হতে হতে আমরা নানা ধরনের ভুল করি। এই ভুল করেই মানুষ শেখে। কিন্তু একটা বয়সের পরে গিয়ে প্রতিটা ভুল আপনাকে ভোগাবে। কারন ভুল শোধরানোর সময় তখন আর থাকে না। ধরুন, আপনি ছয় বছর বয়সে গিয়ে স্কুলে ভর্তি হলেন না। প্রথাগত শিক্ষায় গেলেন না, নিজের মত করে চললেন। বয়স যত বাড়বে, আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবার সম্ভাবন তত কমবে। যদিও জীবন যাপন করতে শিক্ষা অপরিহার্য নয়, কিন্তু এটা নিশ্চিত যে অশিক্ষিত হলে আপনার উন্নত জীবনের সম্ভাবনা কমে যাবে।

আপনি অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, নানান রকম পেটের অসুখে ভোগেন, আবার ঠিক হয়ে যান। কিন্তু একটা সময় পরে আপনার শরীর নিজে থেকে আর এটা ঠিক করতে পারবে না। দরকার হবে ঔষধের। আর এর পরেও যদি আপনি শরীরের জন্য দরকারি খাবার না খেয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে যান, তবে এমন একটা সময় আসবে যখন কোন ঔষধই আর আপনাকে সুস্থ করতে পারবে না।

যারা মাদক নেয়, তারা কিছুদিন ভাল থাকে আবার কিছুদিন অসুস্থ হয়, কিন্তু একটা সময় গিয়ে তারা আর সুস্থ থাকতে পারে না। তাদের পক্ষে আর কখনই সুস্থ জীবনে ফেরা সম্ভব হয় না।

এই না ফিরতে পারাটাই হচ্ছে পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন। আপনার প্রতিটা ভুল আপনাকে এই বিন্দুর দিকে নিয়ে যেতে থাকবে একটু একটু করে। যারা ক্রমাগত ভুল করে যাবে তাদের পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে পোছে যাবার হার বেশি।

আপনার একটা ভুল সিদ্ধান্তের পর আশেপাশের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, আপনার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয় সব থেকে বেশি। যারা পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে পৌছে গেছেন তারা শুধু নিজেরাই ডোবেন না, সাথে আর বেশ কয়েকজনকে নিয়ে ডোবেন। কারন একটাই, মায়া।

লজিক্যাল ডিসিশান হচ্ছে, পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে পৌছে যাবার পর সেই মানুষকে ত্যাগ করা। কিন্তু অনেক সময় আমরা সেটা মেনে নিতে চাই না আবেগের কারনে। ফিরে আসার ক্রমাগত চেষ্টায় সময় এবং আর্থিক অপচয় ঘটে।

মানব শরীর অত্যন্ত নাজুক একটা জিনিস। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস, জীবন যাপন প্রনালীর কারনে আমরা ক্রমাগত পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে পৌছে যাই খুব দ্রুত। একটু একটু করে সময় যায় আর না ফিরতে পারার বিন্দুর দিকে আমাদের দেহ চলে যায়। যারা ব্যায়াম বা শারীরিক কোন পরিশ্রম করেন না, তারা যারা ব্যায়াম করেন তাদের তুলনায় রোগ-শোকে ভোগেন বেশি। একটা বয়সের পরে ব্যায়াম করার সামর্থ্য বা ইচ্ছা আর থাকে না। তখন বেঁচে থাকতে হয় নানা অসুখ আর ঔষধ নিয়ে।

যে কোন দূর্ঘটনা ঘটে যাবার পরে প্রথমে অবিশ্বাস আসবে, যে এমন হতেই পারে না! তারপর আসবে ক্ষোভ, কেন আমার সাথেই এমন হল? এরপর আসবে মেনে নেয়া আর তারপর দুঃখ। কিন্তু যৌক্তিক বিষয় হচ্ছে, পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে পৌছে যাবার পর কোন কিছুতেই আর সেই ঘটনা পরিবর্তন করা যায় না। নিজের অবস্থা মেনে নেয়াটাই তখন সব থেকে উত্তম কাজ।

--

বেশিরভাগ মানুষ জানে না, কোন জিনিসই একদিনে বা হুট করে হয় না। সাম্রাজ্যের পতন, ব্যবসায় সাফল্য, কিংবা শরীর গঠন সব কিছুতেই একটা দীর্ঘ সময় লাগে। দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রমের পরে সাফল্য আসে। নতুন একটা ভাষা শিখতে যান, সেখানেও আপনাকে ব্যায় করতে হবে অনেক সময়। একটা শিশুও নিজের মায়ের ভাষা শিখতে তিন বছরের মত সময় নেয়।

পরিনত বয়সে যে ভুল করে ফেলেছেন সেটা অনেক সময় আর শোধরানো যাবে না। শোধরাতে গেলে নতুন নতুন ভুলের জন্ম হবে। যেটুকে সময় পাবেন এই পয়েন্ট অফ নো রিটার্নের পরে সেটা উপভোগ করার চেষ্টা করুন।

সময় খুবই দরকারি জিনিস, আপনার জীবনে সেটা সীমিত এবং যে কোন পরিমানে টাকা দিয়েও সেটা ফেরত পাওয়া যাবে না।

ভাই যাবেন?

শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিচে বাইক নিয়ে বামে ইন্ডিকেটের দেয়া অবস্থায় বসে ছিলাম। বাইকের পেছনে বউয়ের হেলমেট ঝুলছে। বেশ বড়সড় সাইজের হেলমেট। সেইফটি ফার্স্ট। বউ নাস্তা কিনতে গেছে। মেডিকেলের দিক থেকে উলটা পথে আসা রিকশা গুনছি। 

এক ভদ্রলোক শার্ট ইন করা ফর্মাল ড্রেসে, কালো রঙের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হন হন করে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাবার সময় জানতে চাইলেন, ভাই যাবেন নাকি? আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি তিনি আমাকে কিছু বলছেন। ফুলফেইস হেলমেট পরা আমার, পূর্বদিকের সূর্যের কারনে সান ভাইজর নামিয়ে রেখেছি। দ্বিতীয়বার, একটু সামনে গিয়ে তিনি আবার বললেন যাবেন না?

এবার আমি বুঝতে পেরেছি তিনি কি মিন করেছেন। আমি একটা হাসি দিলাম, কিছু বললাম না। তৃতীয়বার জিগ্যেস করার পর ভাইজর উঠিয়ে তাকে বললাম, না ভাই যাবো না। কিছুটা অবিশ্বাস নিয়ে তিনি সামনে চলে গেলেন।

বউ নাস্তা কিনে আসার পর তাকে বললাম, একটা ছেলে আমাকে জিগ্যেস করল যাবো নাকি। একটু দূরে গিয়েই দেখলাম তিনি এখনো হাঁটছেন। বাইক একটু স্লো করে পেছনে বসা বউকে দেখিয়ে বললাম, "ভাই, এই কারনে যাবো না।"

তিনি রসিকতা মনে হয় বুঝতে পারলেন। বললেন, স্যরি ভাই, আমি মনে করেছি আপনি রাইড শেয়ার করেন। আমিও হাসি মুখে সামনে রওনা দিলাম। 

ভাই যদি এই লেখা পড়ে থাকেন কিছু মনে করবেন না। কিছুটা হিউমার না থাকলে ঢাকা শহরের রাস্তায় বের হলেই মেজাজ খারাপ হবে।

সকাল বেলাতেই শাহবাগে জ্যাম কেন লেগে গেল বুঝলাম না! এটা একটা অসম্ভব রকমের উদাসীন শহর। আপনারা যারা নিয়ম করে সকাল বেলা ধোপদুরস্ত হয়ে বের হন, তাদের জন্য অনেক মায়া। সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়ায় এমন একটা প্রফেশনে আছি, আমাকে রাস্তা মাপতে হয় না। লেখালেখি করেই জীবন পার করে দিতে পারব আশা রাখি।

পাঠাও আপনাদের অনেকের  জন্য একটা নির্ভরযোগ্য বাহন এটা জানি। অনেকের পরিবার চলে একটা বাইকের উপর নির্ভর করে। এই শহরে নিজের গাড়ি এফোর্ড করাটা অনেকের পক্ষেই সম্ভব না। আমাদের শহরের জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তা অনেক অল্প, পাবলিক পরিবহনও নগন্য এবং জঘন্য।

চোখ কান খোলা রাখবেন সর্বদা। এবার আসেন কিছু টিপস দেই। পাঠাও বা ক্ষ্যাপ রাইড শেয়ার করা লোকদের কিভাবে চিনবেন। 

- এরা আমাদের মত শৌখিন বাইকারদের মত আরাম করে বসে থাকবে না। একটু পর পর কোমর বেঁকিয়ে সামনে পেছনে তাঁকাবে যাত্রির আশায়।
- আপনি বলার আগেই বেশিরভাগ সময় নিজের থেকে আপনাকে এপ বাদে ক্ষ্যাপ মারার আমন্ত্রন দেবে। আপনি শুধু সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন, ব্যাস।
- এদের বাইকের অবস্থাও নাজুক থাকবে।
- ৯০ ভাগের পায়ে রাইডিং সু অথবা হাতে গ্লাভস থাকবে না। স্যান্ডেলেই চলে যায়। কারন এদের পা টাইটেনিয়ামের তৈরি।
- জামাকাপড় কিছুটা মলিন থাকবে যেহেতু সারাদিন রোদে পুড়ে বাইক রাইড করতে হয়।

আর এর পরেও যদি চিনতে না পারেন, তবে তার নিজের মাথার এবং পিলিয়নের হেলমেটের দিকে নজর দিন। ময়লা অথবা স্ট্র্যাপ ছেড়া দেখবেন। অথবা ডিমের খোসার মত টোপলা হেলমেট দেখবেন।

আমরা সৌখিন বাইকররা বেশিরভাগ সময়েই ফুলফেইস এবং পরিস্কার দামি হেলমেট ব্যবহার করি। দামী বললাম এই কারনে, কারন মাথা বাঁচাতে হয়। আমাদের পিলিয়নের হেলমেটও বেশ দামি, দেখতে সুন্দর এবং বড়সড় হয়। দেখলেই বুজবেন এগুলো আছাড় দিয়েও আপনি ভাঙ্গতে পারবেন না।

এরপরও যদি কনফিউজ থাকেন, তবে আল্লাহ ভরসা। যেকোন বাইকের পিছনে উঠে বসেন। রাস্তায় এদের তাড়াহুড়া, তিড়িং বিড়িং আর ইন্ডিকেটর বিহীন চলাচল দেখলেই চিনে যাবেন। 

বিশদিন পর ঢাকার রাস্তায় বের হয়ে মনে হল, এইখানে চলতে হলে কোন কিছুতেই মাথা ঘামানো যাবে না। ঢাকার রাস্তার নিয়ম আর জঙ্গলের নিয়ম একই।





আমাদের বিজ্ঞানচিন্তা এবং সাংবাদিকতা

আমেরিকা পৃথিবীর সবথেকে বড় দেশ নয়, বোধহয় চতুর্থ হবে, এমনকি জনসংখ্যার দিক থেকেও সে সবার উপরে নেই। সবচেয়ে বেশি ধার্মিকও সেখানে নেই, তাহলে কোন ক্ষমতাবলে সে পৃথিবীর উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে? সহজ উত্তর হচ্ছে তার প্রযুক্তি এবং সামরিক সক্ষমতায়।

এই দুটো বিষয় আবার নির্ভর করে বিজ্ঞানের পেছনে একটা দেশ কত খরচ করে তার উপর। তার মানে ধরে নেয়া যায় আমেরিকা বিজ্ঞান গবেষনার পেছনে প্রচুর খরচ করে। 

আরেকটু বিশদভাবে বললে আমেরিকান কালচারে বিজ্ঞান এবং শিক্ষার পেছনে খরচ করার মানসিকতা আছে। কালচারের কথা বলছি কারন যেকোন দেশের রাজনীতি, আইন আর স্কুলগুলোর পড়াশোনা নির্ভর করে সেখানকার সংস্কৃতি আর বিনোদনের উপর।

আমি যখনই কোন সায়েন্স-ফিকশন মুভি দেখি, সেখানে আমেরিকানদের উপস্থিতি দেখি। বিগ-ব্যাং থিওরি একটা কমেডি টিভি সিরিজ। কয়েকজন তত্ত্বীয় বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের ল্যাব এবং ল্যাবের বাইরের জীবন সেখানে দেখানো হয়েছে। সিরিজটা এতই মজার আর কমিক রিলিফে ভরা যে যতবার দেখি ভালো লাগে। প্রচুর মানুষ অনুপ্রানিত হয়েছে বিজ্ঞানকে নতুন ভাবে ভালোবাসতে এই সিরিজ দেখে।

সে দেশে কার্ল-সাগান এক জনপ্রিয় নাম। তার হাত ধরে কত শত বাচ্চারা বিজ্ঞানী হবার স্বপ্ন দেখেছে। তাদের মিচিও কাকু এখনো টিভিতে বিজ্ঞানের কঠিন সব বিষয়গুলোকে তুলে আনছেন ফ্যান্টাসি গল্পের মত করে। নেল ডেগ্রেস টাইসন এর পডকাস্ট আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা দেখতে পারবেন বোর হওয়া বাদে।

কি বুঝলেন? এরা শুধু মারামারির মুভি বানায় না, বরঞ্চ বিজ্ঞানকে ভালোবাসা তাদের সংস্কৃতির একটা অংশ বানিয়ে ফেলেছে। সায়েন্টিস্টরা সেখানে সেলিব্রেটির মর্যাদা পায়। 

ইলন মাস্কের কথাই ধরুন, আজকে দেখলাম তার কোম্পানি স্পেস-এক্স একটা রকেট লাঞ্চিং এর পর আবার ডকিং স্টেশনে এসে বুস্টারকে ল্যান্ড করিয়েছে। এ লোকটা কিন্তু ফিল্মস্টার বা ক্রিকেটার নয়, সে ইঞ্জিনিয়ার। বলা হয়ে থাকে আয়রনম্যান মুভিতে টনি স্টার্ক আসলে তাকে পোট্রে করেছে। সত্যি-মিথ্যা জানি না। 

বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে যদি আপনার সংস্কৃতির অংশ বানিয়ে ফেলেন তবে লাখ লাখ স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাকে আপনি অনুপ্রানিত করতে পারবেন ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করার জন্য।

আমাদের দেশে সাই-ফাই লেখক খুবই কম। জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ বাদে বাকি অনেকের লেখাতেই আমি সেই ফ্যান্টাসি খুঁজে পাইনি যেটা একটা বাচ্চাকে অনুপ্রানিত করতে পারে। সত্যজিৎ রায়ের লেখা বিজ্ঞান গল্প, অথবা প্রফেসর শুঙ্কুও আমাকে অনেক আন্দোলিত করেছে ছোটবেলায়। 

বিজ্ঞান নিয়ে টিভি সিরিজ বানানো অনেক দুরের কল্পনা আমাদের জন্য। আমাদের টিভি সিরিজগুলো পড়ে আছে রোমাঞ্চ, খুন-খারাবি আর সস্তা প্রেমের ডায়লগ নিয়ে। আমাদের মা-বাবারা ব্যস্ত থাকেন ভারতীয় সিরিয়াল আর মুভি নিয়ে। শাহরুখ, সালমান আর দিপীকার নাম আমাদের বাচ্চাদের মায়েরাও জানেন।

এদেশে সাংবাদিকরা পড়ে আছে কে কোথায় হেলিকপ্টার বানালো, তেল বাদে বাইক কিভাবে চালালো এইগুলার নিউজ নিয়ে। সংবাদপত্র চাইলে যেকোন জিনসকে জনপ্রিয় করতে পারে যদি তারা চায়। টিভি আর সংবাদপত্র যদি সুডো-সাইন্সের চর্চা করে তবে ভরসা কার উপর রাখা যায়?

ওয়াজ মাহফিল শুরু হলো বলে, শীতকাল আসন্ন প্রায়। এটা এখন আমাদের কালচারের অংশ হয়ে গেছে। আমরা উন্নত হতে চাই, কিন্তু সেই মানসিকতার বীজ বপন করতে চরম অনীহা। আমরা কোটি টাকা খরচ করে পর্নস্টার, নায়ক গায়ক ভাড়া করতে পারি, কিন্তু দেশের বা বিদেশের কোন বিজ্ঞানীকে হাইলাইট করতে চাই না। কিছু কালচার একদিনে হয় না, তাকে হওয়াতে হয়। বাঙ্গালী বিজ্ঞানীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন দেশের বাইরে, কারন সেখানে গবেষনার সুযোগ আছে, বোঝার আর এপ্রিশিয়েট করার মানসিকতা আছে।

আপনি যতক্ষন পর্যন্ত বাইকের ইঞ্জিন দিয়ে হেলিকপ্টার বানানোকে প্রশ্রয় দিয়ে যাবেন আমরা সেটা নিয়ে হাসাহাসি করেই যাবো। আগে এদের পড়াশোনার খোঁজখবর নিন। একাডেমিয়া একদিনে গজায় নাই। এরোন্যাটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আর স্পেস টেকনোলজি নিয়ে পড়তে বাচ্চাদের আগ্রহী করে তুলুন। এই সকল সুডো-সাইন্স দেখলেই ক্যামেরা নিয়ে হুজুগে চলে যাবেন না।

এবার দৃশ্যপট থেকে আমেরিকা শব্দটা বাদ দিন। অন্যকোন দেশের নাম বসিয়ে দিন। জাপান, চীন বা ভারতও হতে পারে। সুজ্যারল্যান্ড, জার্মানি, কানাডাও বসাতে পারেন। এদের সংস্কৃতিও একই রকম। যারাই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে তাদের কালচারের অংশ বানাতে পেরেছে তারাই উন্নতি করছে। এখানে গোপন কোন মন্ত্র নেই। আমরা আজকে থেকে শুরু করলে আমাদের ৫০ বছর লাগবে জাতিকে বদলে দিতে।

শুধু দয়া করে, লাইট বাল্ব আবার আবিষ্কারের চেষ্টা করবেন না। ওটা অপ্রয়োজনীয়, অহেতুক।


অবিশ্বাসের সময়

আমি বাসা থেকে বের হবার খুব একটা সময় পাইনা। যতুটুকু পাই ততটুকুতেও আমি আসলে বের হতে চাই না। বাজারে গিয়ে কোন একটা জিনিস কিনে নিয়ে আসাটা আমার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। কাঁচাবাজারও এই জন্য আমি বেশিরভাগ সময় রাতে কিনি। জানি ঠকছি, তবুও কিনি।

প্রচুর প্রযুক্তি পন্য আমকে কিনতে হয়। আইটি প্রফেশনে থাকায় দরকারি যন্ত্রাংশ কিনতে আমি সাধারণত মাসে একবার এলিফ্যান্ট রোডে যাই। আগে এক বন্ধু সেখানে ব্যবসা করত, তার সাহায্যে সময় বাঁচিয়ে খুব অল্পদামে আমি প্রোডাক্ট কিনতে পারতাম। এখন আর সে নেই।

আমার ভরসার যায়গা এখন অনলাইন থেকে কেনাকাটা করা। যদিও কিছুটা অনাস্থা থেকে যায়, তারপরও চেষ্টা করি বাজারে না গিয়ে বাসায় বসেই যদি সেই কাজটা সেরে ফেলা যায়, তবে দুটো টাকা বেশি গেলেও ক্ষতি নেই।

দারাজ থেকে আমি অনেক অর্ডার করি। চায়নিজ প্রোডাক্টও এরা খুব তাড়াতাড়ি এনে দিতে পারে। কিছুদিন আগে অর্ডার করা একটা এক্সটেনশন কেবল, যেটা আমি মার্কেটে গিয়ে খুঁজেও পাইনি দারাজে অর্ডার দিইয়েছিলাম।

ডেলিভারি ম্যান সাধারণত আমাকে নিচে এসে ফোন দেয়, আমি গিয়ে নিয়ে আসি। আজকে অদ্ভুত বিষয় হল,  দারাজের একজন ডেলিভারি ম্যান ফোন দিয়ে আমাকে বলল, "আমার শরীর খারাপ লাগছে আমি চলে এসেছি হাবে। আপনার প্রোডাক্টটি আমি ডেলিভারড দেখিয়ে দিলাম। কালকে জুমার নামাযের আগে আমি আপনাকে দিয়ে যাবো।"

আমি ছোট্ট করে বললাম, ঠিক আছে।

আমার সমস্যা নেই, এটা অত জরুরী কিছু না। কাল নিলেও হবে। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল, ডেলিভারি কালকেই করুক, কিন্তু ডেলিভারড দেখাতে হবে কেন?

কেবলের দাম বেশি না। সে যদি এটা গায়েব করেও দেয় তবে আমার বিশেষ কোন ক্ষতি হবেনা। তবে আমার মানসিক ক্ষতি হচ্ছে, আমি একে অবিশ্বাস করছি। সে হয়ত আজকে ক্লান্ত তাই দিতে পারছে না, আগামীকাল দেবে। আর রাত ৮ টা বেজে গেছে, সবারই এখন বাসায় ফেরার তাড়া।

কিন্তু আমি এদের অবিশ্বাস করা শুরু করেছি। এমন না যে, আমার কোন প্রোডাক্ট আমি ডেলিভারি পাইনি, বা এর আগেও তারা না দিয়েই বলেছে, দিয়েছি...। তবুও হঠাত করে এই শ'পাঁচেক টাকার প্রোডাক্টের জন্য আমি একজন মানুষকে সময়ের আগেই অবিশ্বাস করছি।

নৈতিকভাবে কি দৃঢ়তা হারাচ্ছি?

আমি মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকতে রাজি আছি, প্রথমবার। দ্বিতীয়বার বোকা সাজতে রাজি না। কিন্তু এই যে অস্থিরতা গত কয়েকদিন আমার মাঝখানে চলে এসেছে সেটা উপভোগ করতে পারছি না।

প্যানিক এটাকে আবার আক্রান্ত হতে যাচ্ছি মনে হয়।

আমি জীবনে অনেকবার ঠকেছি, শিখেছি, কিন্তু কখনো মনোবল হারাইনি। আমাকে যারা ঠকিয়েছে তারা সবাই আমার পরিচিত। অপিরিচিত মানুষের কাছে ঠকেছি খুব কম। হতাশার বিষয় হল মানুষ ঠকানোর শিক্ষা পরিচিতজনের কাছ থেকে নিতে হয়েছে আমাকে।

আমার সমস্যা বা অভাবের কথা আমি কাউকে বলি না। তাতে আমার পরিচিত জনদের ধারনা এই মানুষটা বোধহয় একটা সমস্যাবিহীন জীবনযাপন করে। নারে ভাই, রক্ত মাংসের মানুষ আমি। আপনাদের মত আমাকেও সংসারের বাজেট নিয়ে চিন্তা করতে হয়, কি তরকারি রান্না হবে সেই চিন্তা করতে হয়। বাচ্চার স্কুল, টিফিন নিয়ে চিন্তা করতে হয়। আমার বিশেষত্ব হচ্ছে, আপনি এগুলো নিয়ে গসিপ করেন, আমি করি না। 

আমি নিভৃতে চিন্তা করতে ভালোবাসি।খুব কাছের দু-তিনজন বন্ধুবাদে আমি কারো সাথে সময় নষ্ট করে আড্ডাও দিতে চাই না।

সেদিন অনেক আগের এক বন্ধু, যে লেখালেখি করে, সে আমাকে বলল দেশে এলে আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি অপারগতা জানালাম। কারো সাথে বসে আড্ডা দিতে এখন আর ইচ্ছে করে না। অনেক দূর থেকে কেউ একজন এসে অনিচ্ছুক একটা চেহারা দেখুক, সেটাও চাই না।

দিনদিন ঘরকুনো হয়ে যাচ্ছি। আমার শুধু দরকার এক রুম ভর্তি বই, একটা কম্পিউটার আর কফি।