পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের পরে দেশের কোন কিছুই ঠিক মত যাচ্ছে না। প্রথম কয়েকদিন নব বিবাহিত দম্পতির মত সবাই খুব প্রশংসা করলেও, বিপ্লবের ক্ষত কোনভাবেই মুছে ফেলা যাচ্ছে না। ইউনুস একজন চৌকস ব্যবসায়ী হলেও কার্যত তিনি প্রশাসন চালাতে ব্যার্থ হচ্ছেন।

ক্ষমতার মূল জিনিস হচ্ছে তা প্রয়োগ করতে হয়। অনেক ক্ষমতা নিয়ে বসে থাকলে বা লোকে কি বলবে এই লজ্জা করলে দেশ চালানো যাবে না। সবাইকে খুশি করতে গেলেও নেতা হওয়া যায় না। সেই হিসেবে ইউনুস সরকারের ক্ষমতা মনে হচ্ছে খুব কম।

নভেম্বরে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে। এক কলেজ আরেক কলেজের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে গেছে। কলেজ ভাংচুরেরর পর শিক্ষার্থীরা যা কিছু পাচ্ছে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এর আগেই অটোরিকশা চালকেরা আন্দোলনে নেমেছে। তারাও রাস্তায় মারামারি করছে। তারাও অবৈধ বাহন স্বাধীনভাবে চালাতে চায়।

ঢাকায় মূলত প্রতিদিনই কিছু না কিছু সহিংসতা হচ্ছে। পুলিশ আর আর্মি হার্ড লাইনে যাচ্ছে না। আর্মির ব্যপারটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এরা চাইলে হয়ত অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারত, কিন্তু কেন যেন সেই সদিচ্ছাটা দেখতে পাচ্ছি না।

আজকে আবার দেখতে পেলাম হিন্দু-মুসলিম একটা দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা চলছে। আদালত চত্বরে গন্ডগোলের পর, আদালতের বাইরে সরকারি এক আইনজীবিকে হত্যা করা হয়েছে। ইসকনের একজন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায়। সনাতন ধর্মালম্বীরা আন্দোলনে নেমেছে।

এইখানে একটা ব্যাক্তিগত অবজারভেশন এর কথা বলি, ইসকনের এই লোককে আমি চিনতাম না। হঠাৎ করে ফেইসবুক রিলে তার একটা ভিডিও দেখি। এখন এইসব ভিডিও বেশ চলছে। সেখানে তিনি হিন্দুদের কোন একটা সভায়, জনসংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেকটা মুসলমানদের ওয়াজিয়ান বক্তাদের মত। কি সেলুকাস! একটা দেশের মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোয়ালিটির থেকে কোয়ান্টিটির দিকে যেতে উপদেশ দেয়। কি অথর্ব আর নিন্মশ্রেনীর চিন্তা। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ সবার চিন্তা ভাবনা একইরকম।

মূলত দেশকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা কার্যত দৃশ্যমান এখন। ছাত্ররা জাতির ভবিষ্যত - এই কথাটা এজন্যই বলা যে এরা বড় হয়ে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশের বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব নেবে। মব ভায়োলেন্সে উৎসাহিত একদল তরুণের কাছে কোন ধরনের দায়িত্ব দেয়া মূর্খতা। এদের শিক্ষা সমাপ্ত হয়নি, এবং এদের অভিজ্ঞতা শুধুই প্রতিহিংসার।

এরাই যদি আগামী দিনের দেশের ভবিষ্যত হয়। তবে সামনে শুধুই রক্তাক্ত দিন।

দেশ চালানোর জন্য একটা মাসল পাওয়ার দরকার হয়। কে সেই দায়িত্ব নেবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আবার শুধু মাসল পাওয়ার হলেই হবে না। সেই ক্ষমতাকে সমীহ করার লোকও থাকতে হবে। পুলিশের সাথে আগষ্টে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর, এরা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বাঙালি এমনিতেই উচ্ছৃঙ্খল জাতি - এখন ভয় ভেঙে এরা যত্র তত্র মব ভায়োলেন্সে সব সমস্যার সমাধান চাইছে।

এটাকেই যদি স্বাধীনতা আর গণতন্ত্র বলে, তবে এদেশটা খুব দ্রুত ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে। ধর্ম একটা বিশাল পলিটিক্যাল ট্রাম কার্ড এই উপমহাদেশে। বাংলাদেশের অশিক্ষিত জনগনের উপর সেটা প্রবলভাবে প্রয়োগের চেষ্টা চলছে।

খুব শিগ্রই আরেকটি বিপ্লব অথবা গৃহযুদ্ধের আশংকা করছি। নয়ত দৃশ্যপটে কেউ একজন এসে বলতে পারে, মার্শাল ল' জারি করা হলো। অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারফিউ।



কালকে রাতে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। রাত তখন সাড়ে ন'টা বাজে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বৃষ্টি হলে সাধারণত আমি ফ্যান লাইট বন্ধ করে বারান্দার দিকের দরজাটা খুলে দেই। ঝুম ঝুম একটা শব্দ নামে আমার ঘরে। সাথে ভেজা একটা বাতাস এসে মন ভরিয়ে দেয়।

অনেক অনেক পুরনো স্মৃতিরা ঘিরে ধরে এসময় আমাকে। আমি এই সময়টার নাম দিয়েছে "ইচ্ছে পূরণ"। যা খুশি ভেবে নেয়া যায় তখন। মন ভালো থাকলে কবিতার দুএকটা পংক্তিও মাথায় আসে।

খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু রেঁধে দেবার লোক নেই। নিজের রান্না করতে হবে বলে সেই ইচ্ছেটাকে মাটি দিলাম। একটা চা বানিয়ে আবার চেয়ারে এসে বসেছি। কিন্তু চা খেতেও ভুলে গেছি। এই বৃষ্টির পরে ঢাকায় ঠান্ডা নামতে পারে। এই নভেম্বরে আগে যেখানে হাঁড় কাপানো ঠান্ডা ছিল, এখন সেখানে এসি ছেড়ে রাখতে হয়।

স্কুলে যখন পড়তাম তখন এসময়টা আমার বড়ই আনন্দে যেত। আমাদের বুয়েট স্কুলটা বেশ খোলামেলা, সাথে একটা মাঠও ছিল। ক্লাসের জানালা দিয়ে সোনালি রঙের রোদ এসে পড়ত বেঞ্চের উপর, আমার মুখে। আমার নজর থাকত কখন টিফিনের ঘন্টা দেবে। খুব বেশি পড়ুয়াদের দলে আমি ছিলাম না। গল্পের বই আর কমিক্সেই আমার মন পড়ে থাকত সবসময়। অনেক বেশি বন্ধুও বানাতে পারিনি। তবে দু'জন বন্ধু এখনও টিকে আছে। জীবনের দৌড়ে আমাদের এই তিনজনের একজনও চাকরি-বাকরি কিছু করি না। তবুও বেশ ভালো জীবন কেটে যাচ্ছে।

পড়াশোনাটা শুধু চিন্তার বিকাশের জন্য। আমাদের মনে হয় সেটা হয়েছে। আমরা শুধু পাশ করার জন্য আর চাকরি করার জন্য পড়িনি। তোমরা এখন কিসের জন্য পড়ছ?

ফেইসবুকে ভিডিও দেখেছি, নতুন স্বাধীনতার নাম করে শিক্ষকদের পদত্যাগ করানো হয়েছে। অত্যন্ত অসভ্য ভাবে এবং কুৎসিত উপায়ে। ছোট ছোট বাচ্চাদের আন্দোলন করতে দেখেছি, যাদের মাথায় বিপ্লব মানেই অসভ্যতা ঢুকে গেছে। তোমরা কিসের জন্য পড়াশোনা করছ?

একদল দেখলাম আন্দোলন করছে পরীক্ষার সিলেবাস কমানোর জন্য, আরেকদল অটো পাশ চায়। কেউ আবার রাস্তা বন্ধ করে চাইছে তাদের কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়া হোক সেজন্য! তোমরা আসলে কিসের জন্য পড়ছ?

এই জনপদটা অসভ্য লোকজনে ভরা। এখানে শিক্ষার বারোটা-তেরোটা অনেক আগেই বেজে গেছে। কয়দিন পরপরই সবাই রাস্তা বন্ধ করে অন্যের সময়ের ক্ষতি করে শুধুমাত্র নিজের দাবি আদায়ের জন্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝখান দিয়ে গতকাল বাসায় ফেরার সময় তাবলিগ গ্রুপের স্মরনকালের সবথেকে বড় সমাবেশ এর মাঝখানে পড়ে গেলাম। প্রায় দুই ঘন্টা লাগল এই জায়গা থেকে বের হতে। আমার এই জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এইরকম উজবুকি কান্ড আর দেখিনি। রাস্তায় সারি সারি বাস এনেছে এরা। সারাটা রাস্তা কলার খোসা আর পলিথিনে মোড়ানো খিচুড়ি ফেলা। মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে দেয়া রেলিং টপকে, গাছের পাতা ছিড়ে মাদ্রাসা ছাত্ররা অবাধে পার হচ্ছে।

আমার তখন মনে পড়ল নৈতিকতা শিক্ষা থেকে আসে, আমাদের স্কুল এবং মাদ্রাসাগুলো দুই জায়গাতেই এই শিক্ষাটা ব্যার্থ হয়েছে। আগে আওয়ামীলীগের লোকজন টোকাই ভাড়া করে আনত এখন মাদ্রাসা ছাত্রদের হাতে আলকায়েদার পতাকা ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে, সমাবেশে বাস ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে। নগর জুড়ে নিষিদ্ধ সংগঠনের পোস্টার। জেন-জি জেনারেশন তোমাদের আইডল কারা?

তোমরা কি জানো দেশকে কতদিন পিছিয়ে দিয়েছ তোমরা। যে বাকস্বাধীনতার কথা তোমরা বল, সেটা কোথায়? তোমাদের পক্ষে না থাকলে সবাই আওয়ামীলীগ? এই ধরনের বুদ্ধি নিয়ে তোমরা দেশ চালাতে চাইছ? তোমরা অটো পাশ জেনারেশন বলায় রাগ করো কিসের জন্য? তোমরাতো আদতে সেই দাবিতেই মাঠে নামো।

আগেও কেউ ভালো ছিলো না, এখনো কেউ ভালো নেই, ভালো থাকার সম্ভাবনাও দেখছি না।

ঢাকা একটা ব্যর্থ নগরীতে পরিণত হয়েছে। যার যা কিছু দাবি আছে, আন্দোলন আছে, সব ঢাকার মূল পয়েন্টে এসেই করতে হয়। যান চলাচলের রাস্তাকে রাজপথ নাম দিয়ে সবাই রাজপথের লড়াকু সৈনিক হতে চায়। যদি রাজাই না থাকে, তবে কিসের রাজপথ? কার রাজত্ব?

পৃথিবীর কোন দেশে এই রকম অসভ্যতা চলে রাস্তা জুড়ে? কারা স্কুল ছেড়ে রাস্তায় নামে আবেগ পুঁজি করে? কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না করে, ল্যাবে রিসার্চ করা বাদ দিয়ে রাজনীতি করে? এত এত বিপ্লব কেন করতে হয় বারবার? 

বিজ্ঞান, সাহিত্য আর সংগীতে বুঁদ হয়ে থাকার কথা যে সময়টায়, তখন তোমরা কি করছ? তোমরা কিসের জন্য পড়াশোনা কর? দেশের জন্য যে করোনা সেটা নিশ্চিত। তোমরা যাদের আইডল মানো তাদের অতীত আর বর্তমান অবস্থা দেখেছ?

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা ব্যর্থ, আমাদের গণতন্ত্র একারনেই কাজ করে না। আরও পঞ্চাশ বছরেও কাজ করবে বলে মনে করছি না। যা কিছু সুন্দর তা নষ্ট করে যদি দাবি আদায় করতে হয় তবে জেনে নিও, ভূল হয়ে গেছে। কোথাও একটা বড় ভূল হয়ে আছে।