লেজকাটা শেয়াল এবং মনস্তত্ত্বের খেলা
শেয়ালের গল্পটা মনে আছে? সেই যে তার লেজ কাটা বলে সে অন্যদেরও ফুসলিয়ে নিয়ে যায় লেজ কাটার জন্য। তার আগে সে বর্ননা করে লেজ কাটা থাকার মাহাত্ব্য কত প্রকার এবং কি কি?
বাংলাদেশীদের চরিত্র অনেকটা এই শেয়ালের মত। সে কোন কাজে যদি অসফল হয় তাহলে সে চায় তার সবচেয়ে কাছের ব্যাক্তিরাও অসফল হোক। তাতে তার নাক বাঁচে। বন্ধুদের মাঝে কেউ ভালো কিছু করলে বা চাকুরিতে প্রমোশন পেলে তাই তার হিংসা হয়। নিজে ফেল করলে সমস্যা নাই, কিন্তু বন্ধু পাশ করে গেলে অনেক বেশি দুঃখ হয়।
মনে মনে তারা ভাবে - যদি আমি ভুল করি তবে অন্যরা বাদ যাবে কেন? কেউ ভালো কিছু করতে গেলে পেছন থেকে টেনে নামানোও এই একই মনস্তত্ত্বের বহিঃপ্রকাশ। আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের নিন্দা করে, সমালোচনা নয়। সমালোচনা করতে গেলে সেখানে খারাপ এবং ভালো দুটো নিয়েই আলোচনা করতে হয়। কিন্তু আমি যতদিন দেখেছি এরা যখনই হাতে মাইক পায় শুরু হয় বদনাম করা। নিজেদের স্তুতির সাথে সাথে প্রতিপক্ষকে যেনতেন ভাবে সবার সামনে উলঙ্গ করাই এদের প্রধান কাজ।
স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে একটা সেক্যুলার সিস্টেম। সেখানে সব কিছু পড়ানো হবে, কোন ধর্মের বইয়ের সাথে মিললো সেটা দেখার বিষয় নয়। অথচ এই সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিক্টেট করতে চায় লেজকাটা শেয়ালেরা। বাচ্চারা কি পড়বে না পড়বে সেটা ধার্মিকেরা কেন তৈরি করবে? ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা আছে, মক্তব আছে, হেফজখানা আছে। যার দরকার ইসলামিক লাইনে পড়াশোনা করার সে সেখানে গিয়ে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহন করবে। এমনিতেই দেশের পাঠ্যবইয়ে ভুল এবং আদিম তথ্যে ভরা। তার উপর যদি মোল্লাতন্ত্রের খড়গ চলে এবং ধর্ম ঠিক করে দেয় কি পড়ানো যাবে আর কি পড়ানো যাবে না, তবে আমাদের বর্তমান অন্ধকার আরো ঘন হবে।
কে কি পড়বে না পড়বে সেটা এই যুগে এসে ঠিক করে দেয়াটাই এক ধরনের মূর্খতা। পৃথিবীর জ্ঞান হতে হবে উন্মুক্ত। তুমি মুর্খ বলেই আরেকজনকেও কেন মূর্খ বানাতে হবে?
লেজকাটা শেয়ালেরা জীবন উপভোগ করে না। তারা মনে করে পৃথিবীতে আনন্দ করা নিষিদ্ধ এবং জ্ঞান অর্জন করা পাপ। শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার প্রচলন করেই এই জনপদে সকল ধরনের শান্তি এবং উন্নতি আনা যাবে। এরা এখন দলবদ্ধ হয়ে মাইকে রাজনৈতিক নেতাদের মত হুংকার দিচ্ছে। মেয়েদের ফুটবল খেলায় বাধা দিচ্ছে, কনসার্ট-নাটকে হামলা চালাচ্ছে, হোটেলে গিয়ে নিজেরাই অভিযান চালাচ্ছে কেন সেখানে গরুর মাংস বিক্রি করা হয় না এই অপরাধে! একটা সাধারণ মানের খাবার হোটেল কি বিক্রি করবে আর কি করবে না, সেটা এরা ঠিক করে দিচ্ছে। এরা যখন স্বৈরতন্ত্রর অধীনে থাকে, তখন বাক স্বাধীনতার কথা বলে, সমানাধিকারের কথা বলে, কিন্তু গোয়াল থেকে ছাড়া পেলেই বাকি সবার স্বাধীনতা হরনে নেমে যায়।
শুধুমাত্র গরু জবাই করে পিকনিক করাকে এরা স্বাধীনতা উপভোগ করার মাধ্যম হিসবে বেছে নিয়েছে। কি অদ্ভুত! বাঙ্গালী প্রতিবছর লাখে লাখে গরু জবাই করে খায়। কেউ এটাকে বিশেষ কিছু মনে করে না। কিন্তু শেয়ালেরা ভাবে বিশ কোটির সবাই মনে হয় তাদের মতই চিন্তা ভাবনা করে। তাই জায়গায় বেজায়গায় তারা এখন এই গরু জবাই করে খাওয়া-দাওয়া করছে। দেশের বিশেষ কোন উপকার না হলেও এরা এটাকে বিজয়ের আনন্দ হিসেবে উদযাপন করছে।
এই গোষ্ঠীকে আপনি মব বলেন আর তৌহিদি জনতাই বলেন, এরা আদতে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অকালকুষ্মাণ্ড রাজনৈতিক শেয়ালদের স্বেচ্ছাচারিতারই ফল। রাজনৈতিক শেয়ালেরা কখনই চায়নি দেশের জনগন শিক্ষিত হোক। শিক্ষিত হলে তাদের ভোটবাক্সে টান পড়বে। শোষন করার মত ভেড়ার পাল পাওয়া যাবে না। এরা একটা ভেড়ার পাল তৈরি করেছে।
ভোটের জন্য মাথা দরকার, বুদ্ধিমান দরকার নাই। কেউ ধর্ম বেচেছে, কেউ আবেগ আর চেতনা - সব একই রকম শেয়াল। নিজেদের লেজ কাটা বলে অন্যদেরও এরা তাই করেছে। একটা অপদার্থ জনগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে যারা দেশের সম্পদ নয়, বরঞ্চ বোঝা।
নারীরা সমাজের একটা বিশাল অংশ। যে কোন ভাবেই হোক তাদের ঘরের মাঝে বন্দী রাখতে পারলেই এই শেয়ালদের লাভ। তাই পর্দার নামে আপাদমস্তক ঢেকে ফেলাটাকে এরা আবশ্যকীয়তার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এরপর এই ব্রেইন ডেডদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে জনতার মাঝে। তাই কখনো এরা আন্দোলন করে বিনা ফটোর এনআইডি কার্ডের জন্য, অথবা প্রচারনা চালায় বহুবিবাহের সুফল নিয়ে। এই সব শেয়ালদের শিকার মূলত নতুন প্রজন্মের নারীরা।
বহুবিবাহে পুরুষের লাভ আছে। সে অনেক সম্ভোগের সাথী পায়। কিন্তু নারীদের কিছু পাবার নেই সেখান থেকে। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে কোন কাজে অংশগ্রহন করতে গেলে আপনার ফটো আইডি লাগবে। সেটা এনআইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা পাসপোর্ট সব ক্ষেত্রেই একই নিয়ম। সেখানে ছবি বাদে আইডি বানানোর দাবি করা মানে এই সকল কর্মকান্ডে এই নারীরা আর অংশগ্রহন করতে পারবে না। সম্পত্তির উত্তরাধিকার পেতেও সমস্যা হবে এই নারীদের। কারন রাষ্ট্র তাদের ছবি বাদে আইডি দেবে না। এরা অবাঞ্ছিতই থাকবে।