পোস্টগুলি

এপ্রিল, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আমার মন খারাপের বিকেলে সন্ধ্যা নামে বাগানবিলাসের নিচে

খুব বেশি মন খারাপ হলে কি করি? 

মন ভালো করার অহেতুক চেষ্টা আমি করি না। আমার মন খারাপের কারন অন্যেরা না যতটা তার থেকে বেশি আমি নিজে। কারন অন্যদের কথায় আমি গুরুত্ব দেই। অন্যরা বলতে খুব কাছের মানুষেরা। তারা যা বলে সেটাই বিশ্বাস করতে চাই। এরপর যখন নিজে ভুক্তভুগি হই তখন মন খারাপ হয়।

না বলাটা আমার পছন্দ ছিল না এককালে। খুব কষ্ট করে সেটা আয়ত্ব করেছি। নিজের যা ভাল লাগে না, সেটাতেই এখন হুট করে না বলে দেই। এর পরেও কেউ খুব ঝোলাঝুলি করে। তখন আমি চুপ করে থাকি। অহেতুক কথা বলাটা আমার পছন্দ নয়। একসময় তারা রণে ভংগ দেয়। আমার নিরবতা জিতে যায়। আমার স্বভাবের কিছুটা বোধহয় আমার মেয়েটা পাচ্ছে।

মন খারাপ হলে আমি গান শুনি, বাংলা মেলোডিয়াস গান। কিছুক্ষনের জন্য হারিয়ে যাওয়া যায় সুরের ভুবনে। খুব অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে আমি স্লো মিউজিকের গান বাদে ইদানিং আর কিছু পছন্দ করি না। এটা মনে হয় বয়সের স্বভাবে হয়েছে। এত এত সুন্দর বাংলা গান আমাদের আছে ভাবতেই ভাল লাগে।

মানুষের সংগ এড়াতে, নিজেকে বাসায় বন্দি রাখতে আমার সমস্যা হয় না। কারন পৃথিবীর বিখ্যাত যে কোন বই আমার হাতের নাগালে থাকে আর অগুনিত সায়েন্স ফিকশন মুভি। প্রযুক্তি আমাকে এই নিঃসঙ্গ থাকার অধিকার দিয়েছে। মাঝে মধ্যে বাইক নিয়ে ঢাকার রাস্তায় অহেতুক ঘুরতেও ভাল লাগে। রাস্তায় নামলে বোঝা যায় মানুষের অনেক তাড়া, রাগ-ক্ষোভ। দেখতে ভালো লাগে।

একসময় অনেক আড্ডা দিয়েছি। রাত-দিন আড্ডার পেছনে বুঁদ থাকতাম। এখন মনের মত সঙ্গী না পাওয়ায় আর আড্ডা দিতে ভালো লাগে না। আমি সাহিত্য আর বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতে চাই ঘন্টার পর ঘন্টা। সেরকম কাউকে খুঁজে পাই না। পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেল অবধারিত ভাবে চলে আসে রাজনৈতিক আলাপ। কাঁহাতক আর একই একই বস্তা পঁচা আলাপ করা যায়?

ইদের সময় তাই এবার বাসা থেকে বের হইনি। খুব আনন্দের একটা সময় কেটেছে একাকি। ঢাকায় ছুটির দিনে বের হলেই মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যেতে হয়। জীবন উপভোগ না করতে পারা মানুষেরা রাস্তায় অহেতুক ভীড় করে। এই শহরে যেহেতু আনন্দ কেন্দ্রের অভাব, তাই যত সামান্য রাস্তায়, ব্রিজে আর শপিং মল গুলোতে তাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। 

একটা শহরের মানুষের প্রধান আনন্দ উদযাপনের প্রক্রিয়া হচ্ছে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া। কি অদ্ভুত অস্বাস্থ্যকর একটা নিয়ম বানিয়ে ফেলেছি আমরা। রেস্টুরেন্টের খাবার এমনিতেই আমার খুব অপছন্দের একটা বিষয়। জীবন বাঁচানোর জন্য যে ভাত-ডাল আর আলুভর্তা রান্না করতে হয় সেটা আমি নিজেই পারি। তবুও মাঝে মধ্যে রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে হয় সময় বাঁচানোর জন্য। সেটা অবশ্যই শখ করে নয়। আমি হোম ডেলিভারি নেই। বাসায় বসে খাই। খেতে খেতে বিজ্ঞান বিষয়ক কোন একটা টকশো দেখি ইউটিউবে।

বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে নিজেকে যতই উন্নত করছি ততই একা থাকতে ভালো লাগছে। অহেতুক আলোচনা বিরক্তিকর মনে হয়, আর কাউকে ভূল সিদ্বান্ত নিতে দেখলে মন খারাপ হয়। 

আমি একসময় অনেক উপদেশ বিলি করতাম। সেটা অবশ্য খুব কাছের মানুষদের। এখন সেটাও করি না। ভূল না করলে কেউ শেখে না। কিছু কিছু ভূল আবার এত মারাত্বক যে তারা পয়েন্ট অব নো রিটার্ন পার হয়ে যায়। সাবধান করার পরেও যারা বোঝেনা, তাদের জন্য মায়া দেখাতে গিয়েও মন খারাপ হয়।

কিছু জিনিস শেখা সবার খুব দরকারঃ

- শিক্ষা কাউকে দেয়া যায় না, যদি না তার শেখার মানসিকতা থাকে। তাই অহেতুক উপদেশ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নিজের থেকে কম বুদ্ধিমান কারো সাথে তর্ক করতে যাওয়া যাবে না। এরা আপনার সময় আর মানসিক শান্তি নষ্ট করবে।
- ধর্ম আর রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস যত কমাবেন নিজেকে তত স্বাধীন মনে হবে। দুইটাই আপনার চিন্তার প্রসারকে পরাধীন করে দেয়। ভুল সিদ্বান্ত নিতে উৎসাহী করে।
- টাকার থেকে বড় বন্ধু আপনার কেউ নাই। যারা আজকে আপনাকে মূল্যায়ন করছে বা সেলাম ঠুকছে তারা এই টাকার ক্ষমতার কারনেই দিচ্ছে।

এই লেখাটা যখন লিখছিলাম তখন বেশ মন খারাপ ছিল। লিখতে লিখতে সেটা ভালো হয়ে গেছে। মন খারাপ হলে তাই আমি লিখিতে বসি। মন ভাল থাকলেও লিখি। তবে লেখালেখি মন ভাল করে দেয়ার একটা অন্যতম উপায় আমার কাছে।